লন্ডন:  এ যেন রূপকথার যাত্রা। শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৯-এ। তখন মুম্বইয়ের বান্দ্রায় রিজভি কলেজে হোটেল ম্যানেজমেন্ট স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করতেন দুই বন্ধু সুজয় সাহানি ও সুবোধ জোশী।এরপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাওয়ার জন্য তাঁরা লন্ডনে যান। পড়াশোনা সম্পূর্ণ করে দুজনেই প্রথমসারির হোটেলে চাকরি পেয়ে যান।

সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু একটা সময় নেমে এল আর্থিক মন্দার কালো ছায়া। চাকরি খোয়ালেন সুজয়। চাকরি হারিয়ে তখন চরম বিপদে সুজয়। বন্ধু সুবোধকে একদিন নিজের সংকটের কথা জানিয়ে বললেন, তাঁর কাছে বড়া পাও খাওয়ারও পয়সা নেই। কে জানতে, এই কথাটাই দুই বন্ধুর ভাগ্যটাই বদলে দেবে!

কয়েকদিনের মধ্যেই সুজয়ের মাথায় বড়া পাও-এর দোকান খোলার ভাবনা আসে। তাঁর সেই পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন সুবোধও। অনেক খুঁজেপেতে লন্ডনের জনবহুল হৌনসলো-তে দোকান খোলার চেষ্টা শুরু করলেন তাঁরা। সেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লোকজনের যাওয়া-আসা লেগেই রয়েছে। কিন্তু জায়গা মেলেনি প্রথমে। ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা পৌঁছলেন পোল্যান্ডের এক নাগরিকের আইসক্রিম ক্যাফেতে। ক্যাফেটা খুব ভালো চলছিল না। ক্যাফের মালিকের কাছে গিয়ে নিজেদের জন্য দুটি টেবিল ভাড়ায় দেওয়ার আর্জি জানালেন সুজয় ও সুবোধ। ক্যাফের মালিককে মাসে ৪০০ পাউন্ড অর্থাত্ ৩৫ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। প্রথমে গররাজি হলেও পরে দুটি টেবিল ভাড়া দিতে রাজি হলেন ক্যাফে মালিক।

২০১০-এ দোকান খুললেন তাঁরা। প্রথমে বড়া পাও ৮০ টাকায় ও বেডলি ১৩১ টাকা দামে বিক্রি শুরু করেন। ভারতীয় এই খাবার জনপ্রিয় করতে স্বল্প খরচের বিজ্ঞাপনের আশ্রয়ও নেন তাঁরা।

ছয়মাস পর প্রথম লাভের মুখ দেখলেন দুই বন্ধু। এরপর ক্যাফেতে দোকান বন্ধ করে কিছুটা দূরে স্টল খুললেন। সেখানে সামনেই একজন পঞ্জাবি রেস্তোরাঁ মালিক ছিলেন। তাঁকে অংশীদার করে ব্যবসা নয়া উদ্যমে শুরু করেন দুই বন্ধু। শ্রী কৃষ্ণ নামে রেস্তোরাঁ খুললেন।

এরপর সুবোধও চাকরি ছেড়ে ব্যবসাতেই পুরোদস্তুক নেমে পড়েন। দু বছর পর তাঁরা হ্যারোতে দ্বিতীয় স্টল খোলেন। গত বছর পিনারে আরও একটা। এখন তাঁদের দোকানগুলিতে ৩৫ জন কর্মী। বার্ষিক আয় প্রায় ৪.৪০ কোটি টাকা।