নয়াদিল্লি: কেন্দ্রে এনডিএ সরকার সম্ভত তাঁদের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে ফের দেশজুড়ে বইয়ে দিতে চলেছে মোদী হাওয়া। এবিপি নিউজ-আইএমআরবি-র করা যৌথ সমীক্ষার দাবি, যদি এখনই লোকসভা নির্বাচন হয়, তাহলে ফের রাজধানীর মসনদে ফিরতে চলেছে এনডিএ সরকারই। সমীক্ষার দাবি, ২০১৪ সালের চেয়ে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে এখনই ভোট হলে ৩৪২টি আসন পেতে চলেছে এনডিএ। শুধু এনডিএ নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও রয়েছেন নেতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।


সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে এখনও পর্যন্ত দেশজুড়ে মোদী সরকারের জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাটা পড়েনি। যৌথ সমীক্ষার দাবি, ২০১৪ সালের তুলনায় বেশি আসন সংখ্যা পাচ্ছে ইউপিএ-ও। গত লোকসভা নির্বাচনে ইউপিএ পেয়েছিল ৬২টি আসন। এবারে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৬৬। সমীক্ষায় বাম দলগুলিরও আসন সংখ্যা দশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪। অন্যান্যরা সবমিলিয়ে পাচ্ছে ১২১ আসন।









সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে দেশের প্রতিটি অংশেই এনডিএ-র ভোট শতাংশের হিসেবে বেড়েছে। উত্তরে গত নির্বাচনে এনডিএ পেয়েছিল ৪৫ শতাংশ ভোট, এখন ভোট হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫২ শতাংশ। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গতবছর বিধানসভা নির্বাচনে বিহারে নিজেদের জনপ্রিয়তা আরজেডি, জেডিইউ এবং কংগ্রেসের কাছে হারালেও, আবার সেই গ্রহণযোগ্যতা ফিরে পাচ্ছে মোদী সরকার।

তবে সমীক্ষায় পঞ্জাবে ভাল ফল করেনি এনডিএ। পূর্ব ভারতে ২০১৪ সালে ২৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল মোদী সরকার। বর্তমানে ভোট হলে ৩৮ শতাংশ ভোট পাবে এনডিএ। এরমধ্যে ভাল ফলের আশা করা হচ্ছে ওড়িষ্যা ও অসম থেকে। এদিকে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে এখনই ভোট হলে সমীক্ষা বলছে আসন সংখ্যা কমবে, তবে শতাংশের হিসেবে ভোটের হার ৫৩ থেকে বেড়ে ৫৮ শতাংশ হবে। দক্ষিণ ভারতেও পাল্লা ভারী এনডিএ-র। ৫০টি আসন ও ৩৫ শতাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা।

যৌথ সমীক্ষায় সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার তকমাও পেয়েছেন মোদী। প্রসঙ্গত, প্রতি সেকেন্ডে একজন করে ভারতবাসীকে তাঁদের পছন্দের জনপ্রিয় নেতার নাম বলতে বললে, মোদীর নাম উল্লেখ করেছেন। জনপ্রিয়তার বিচারে রাহুল গাঁধীর চেয়ে ওপরে রয়েছেন সনিয়া গাঁধী। জনপ্রিয়তার বিচারে অরবিন্দ কেজরিওয়াল পেয়েছেন ৯ শতাংশ ভোট। তবে জনপ্রিয়তার নিরিখে শতাংশের হিসেবে অন্য নেতা-নেত্রীদেরকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছেন মোদী।

এই সমীক্ষা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, ভোট ময়দানে অন্য দলগুলির চেয়ে এখনও অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি/এনডিএ। দেশের প্রায় প্রত্যেক প্রান্তেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ফিরতে চলেছে এনডিএ। শুধু পঞ্জাবে বিজেপি পরিচালিত এনডিএ সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস লক্ষ্য করা গেছে। উল্লেখ্য আগামী বছরই বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে এরাজ্যে। তবে পঞ্জাবে আসন হারালেও, পূর্বে শক্ত মাটি তৈরি করতে পেরেছে এনডিএ সরকার। তবে উত্তরপ্রদেশে একইরকম গ্রহণযোগ্য রয়েছে এনডিএ। ২০১৭ সালে সেখানে বিধানসভা ভোট রয়েছে।

সমীক্ষা বলছে, বিহারে নিজেদের হারানো জায়গা ফিরে পেয়েছে এনডিএ। দক্ষিণেও অন্ধ্রপ্রদেশ-কর্নাটকে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। পশ্চিম ভারতে ভোট বাড়লেও, আসনসংখ্যা কমেছে। তবে ইউপিএ আসন সংখ্যার বিচারে তেমন বাড়াতে পারেনি তাদের ভোট। বেড়েছে ভোটে শতাংশের হার।

তাহলে এই যৌথ সমীক্ষা থেকে কি পেল দেশ, দেখে নেওয়া যাক একনজরে,

মোদীর জনপ্রিয়তা: জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর

মোদীর পারফর্মেন্স: ৪৯ শতাংশ সাধারণ মানুষ মোদীকে 'ভাল' বা 'খুব ভাল'র তকমা দিয়েছে। ৩২ শতাংশ মানুষ মোদীর পারফর্মেন্স মোটামুটি বলেছেন।

বিজেপি পরিচালিত মোদী সরকারের পারফর্মেন্স: ৩৬ শতাংশের দাবি, এনডিএ সরকারের পারফর্মেন্স 'দারুন' বা 'ভাল', ৩৩ শতাংশ মানুষ বিজেপি পরিচালিত এনডিএ সরকারকে 'মোটামুটি'র তকমা দিয়েছে।

এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে সেরা প্রধানমন্ত্রী: নরেন্দ্র মোদীকে এখনও পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে জনসাধারণ। তাঁর কিছুটা পিছনে রয়েছেন ইন্দিরা গাঁধী এবং অটল বিহারী বাজপেয়ী।

সবচেয়ে খারাপ প্রধানমন্ত্রী কে, এই প্রশ্নের উত্তরে ৫৪ শতাংশ মানুষ, কোনও উত্তর দেননি। যাঁরাও উত্তর দিয়েছেন, তাঁদের বিচারে মনমোহন সিংহ হলেন সবচেয়ে খারাপ প্রধানমন্ত্রী

মন কি বাত-এর প্রভাব, যাঁরা মন কি বাত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তাঁদের দাবি, সমাজে এই অনুষ্ঠানের সুফল পড়ছে। মোদীর সঙ্গে সমাজের জনসংযোগ আরও দৃঢ় হচ্ছে।

আচ্ছে দিন, মানুষ মনে করেন ‘আচ্ছে দিন’ এখনও আসেনি
নীতীশ কুমার কি সরাতে পারবেন নরেন্দ্র মোদীকে, সমীক্ষা বলছে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদীর পরিবর্তে নীতীশ কুমার আসছেন না প্রধানমন্ত্রী পদে।

বিশাল জনপ্রিয়তা পেয়েছে মোদীর স্বচ্ছ ভারত অভিযান এবং মোদীর জন ধন যোজনা

তবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মোদী সরকারের সফলতা প্রসঙ্গে দুধরনের মত পাওয়া গিয়েছে। শিল্পে উন্নতি, দুর্নীতি দমন, বিশ্ব মঞ্চে ভারতের ভাবমূর্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে মোদী সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে আশাবাদী প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে।

কালো টাকা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ ব্যর্থ এনডিএ, সমীক্ষায় তার প্রতিফলনও পাওয়া গেছে।

  • আগামী একবছরে মোদীর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি হতে চলেছে, ভোটারদের দাবি, গ্রামগুলোর উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজনীয়

  • খরা পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশের মানুষ ওয়াকিবহাল। তাঁরা মনে করেন কেন্দ্রীয় সরকার খরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই ধারণা অবিলম্বে বদলাতে হবে।

  • অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলা নিঃসন্দেহে গর্বের, কিন্তু যে বা যাঁরা বলতে চান না, তাঁদের ওপর জোর জবরদস্তি করা বা তাঁদের দেশদ্রোহী তকমা দেওয়া অনুচিত।

  • মানুষ চায় দেশে সংরক্ষণ থাকুক তবে তা অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে।

  • সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই মনে করেন না দেশে গত দুবছরে অসহিষ্ণুতা বেড়েছে।

  • দেশের ৫০ শতাংশ মানুষ বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ ক্যাম্পাসে রাষ্ট্রবিরোধী কাজকর্ম বেড়েছে, এসম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। যাঁরাও ওয়াকিবহাল, তাঁদের মধ্যেও দ্বিমত রয়েছে, এধরনের পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষেত্রে মোদী সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে।

  • দেশের বেশিরভাগ মানুষই এটা বিশ্বাস করেন না যে ২০২২ সালের মধ্যে চাষীদের আয় দ্বিগুন হয়ে যাবে।