নয়াদিল্লি: নির্ভয়া মামলায় চার দোষীর মধ্যে একজন বিনয় শর্মার আর্জি নাকচ হয়ে গেল দিল্লির এক আদালতে। এই আর্জিতে বিনয় দাবি করেছিল যে, সে মানসিকভাবে অসুস্থ ও তার চিকিত্সার প্রয়োজন। অতিরিক্ত দায়রা বিচারক ধর্মেন্দ্র রানা বিনয়ের আর্জি খারিজ করে দেন। আদালত বলেছে, মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে চিন্তা ও অবসাদ স্বাভাবিক বিষয়। নিশ্চিতভাবেই দোষীকে পর্যাপ্ত চিকিত্সা ও মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে।
আদালত বিনয়ের আর্জি খারিজ করে দেওয়ার পর নির্ভয়ার মা আশা দেবী বলেছেন, ওই দোষীর চিকিত্সার কিছু ছিল না। এটা শুধু মামলায় দেরি করার চেষ্টা। সাত বছর পর আজ ওদের আদালতে স্ত্রী, বোন ও মায়ের কথা মনে পড়ছে। ওদের নির্যাতনের শিকারও কারুর বোন-মেয়ে ছিল। আমিও কারুর মেয়ে ও স্ত্রী। সাত বছর ধরে আদালতের দরজায় ঘুরছি।
আদালতে দায়ের করা আর্জিতে দাবি করা হয়েছিল, বিনয়ের মাথায় গভীর চোট লেগেছে। ডান হাত ভেঙে গিয়েছে ও সেখানে প্লাস্টার রয়েছে। সে মানসিক রোগ ও সিজোফ্রেনিয়াগ্রস্ত।
শুনানিতে তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ বিনয়ের ওই দাবি খারিজ করে দেয়। জেল কর্তৃপক্ষ আদালতে জানায়, বিনয় নিজেই নিজেকে আঘাত করে জখম হয়েছে এবং সে কোনও রকম মানসিক রোগের শিকার নয়। জেলের পক্ষ থেকে মনোরোগ চিকিত্সক জানান, দৈনন্দিন ভিত্তিতে চার দোষীরই চিকিত্সা করা হয়েছে এবং তারা সবাই ঠিক আছে।


উল্লেখ্য, আগামী ৩ মার্চ নির্ভয়া মামলায় চার দোষীর সাজা কার্যকরের জন্য পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। তার ১০ দিন আগে তাদের পরিবারের সঙ্গে অন্তিম সাক্ষাত্ নিয়ে চার দোষীকে চিঠি দিল তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ।
জেলের এক পদস্থ আধিকারিক সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন যে, পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাত্ নিয়ে চার দোষীকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ওই আধিকারিক বলেছেন, মুকেশ ও পবনকে জানানো হয়েছে যে, তারা ইতিমধ্যেই শেষ সাক্ষাত্ করে নিয়েছে। অক্ষয় ও বিনয়কে তাদের শেষ সাক্ষাতের দিন জানাতে বলা হয়েছে। এছাড়াও চারজনের ক্ষেত্রেই সপ্তাহে দুই দিন নিয়মিত সাক্ষাত্ চলবে।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লির একটি আদালত নির্ভয়া ২০১২-র গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় চার দোষীর ফাঁসির সাজা আগামী ৩ মার্চ সকাল ছয়টায় কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে আদালত বলেছে, সাজা কার্যকর আরও পিছিয়ে দিলে তা হবে নির্যাতিতার অধিকারের অবমাননা।

আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ধারা ২১-এ সাজাপ্রাপ্ত দোষীদের তাদের আইনি অধিকার প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। তবে এই সুযোগের ব্যবহার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। সাজা কার্যকর এর আগে দুই বার পিছিয়ে গিয়েছে। আরও পিছিয়ে গেলে তা নির্যাতিতার দ্রুতবিচার পাওয়ার অধিকার খর্ব করবে।
এই মামলায় মৃত্যু পরোয়ানা জারির জন্য দায়ের করা পিটিশনের শুনানিতে এই মন্তব্য করেছিল আদালত।
গত ৩১ জানুয়ারি এক নিম্ন আদালত চার দোষীর সাজা কার্যকর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল।
চার দোষীর মধ্যে পবন কিউরিটিভ পিটিশন বা প্রাণভিক্ষার আর্জি জানায়নি।