নয়াদিল্লি: নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চার দোষীর ফাঁসির রাস্তা সাফ। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ দোষী পবন গুপ্তার প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করে দিলেন। দোষীদের কাছে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে আর কোন বিকল্প নেই। ৩ মার্চ সকাল ছয়টায় ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল চার দোষীর। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছে পবনের প্রাণভিক্ষার আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির পাতিয়ালা আদালত পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত দোষীদের সাজা কার্যকরের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। এখন রাষ্ট্রপতি তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন।চার সাজাপ্রাপ্তর মধ্যে পবনই সবার শেষে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছিল। গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি অক্ষয় সিংহ ঠাকুরের আর্জিও নাকচ করেছিলেন। এর আগে বিনয় শর্মা ও মুকেশ সিংহর পিটিশনও খারিজ হয়ে গিয়েছিল।
এবার নতুন করে জারি হবে মৃত্যু পরোয়ানা
৩ মার্চই দোষীদের ফাঁসি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইনি ফাঁকফোকর ব্যবহার করে নির্ভয়া মামলায় অন্যতম দোষী পবন সুপ্রিম কোর্টে রায় সংশোধনের আর্জি খারিজের পর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সাজা কার্যকরের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। আদালত মনে করেছিল, রাষ্ট্রপতি ওই আর্জি সম্পর্কে কখন সিদ্ধান্ত নেবেন, তা অনুমান করা যায় না। তাই প্রাণভিক্ষার আর্জি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত আসার পরই নতুন করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হবে। এখন রাষ্ট্রপতি আর্জি খারিজ করে দেওয়ায় শীঘ্রই নতুন মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হবে।


সূত্রের খবর, ফাঁসি চলতি মাসেই হবে। তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ কালো পরোয়ানার আর্জি জানিয়ে দিল্লির আদালতের দ্বারস্থ হবে। আদালতই চার দোষীর সাজা কার্যকরের দিন ধার্য করবে।

তিনবার মৃত্যু পরোয়ানা স্থগিত হয়েছে
প্রথম মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়েছিল ৭ জানুয়ারি। ওই পরোয়ানা অনুসারে ২২ জানুয়ারি ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল। ওই পরোয়ানা কার্যকরের আগে ১৭ জানুয়ারি নতুন করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়। কারণ, নির্ভয়া মামলায় অন্যতম দোষী বিনয় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছিল। দ্বিতীয় মৃত্যু পরোয়ানাতেও ১ ফেব্রুয়ারি স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। কারণ, বাকি দুই দোষী পবন ও অক্ষয়ের কাছে আইনি বিকল্প ছিল। এরপর আরও একবার ১৭ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়। এই পরোয়ানাতেও স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। এবার পবনের আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ায় চার দোষীর কাছেই আইনি ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে সাজা কার্যকরে বিলম্ব ঘটানোর কোনও সুযোগই নেই।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর, দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন প্যারামেডিক্যাল ছাত্রী। অপরাধীদের নৃশংসতায় শিউরে ওঠে গোটা দেশ। ১৩ দিন পরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে জীবনযুদ্ধে হার মানেন নির্ভয়া!
ঘটনায় এক নাবালক-সহ গ্রেফতার হয় ৬ জন। তাদের মধ্যে ২০১৩ সালে তিহাড় জেলে আত্মঘাতী হয় অন্যতম অভিযুক্ত ও বাসচালক রাম সিং। বাকি পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে ২০১৩-তে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেয় নিম্ন আদালত। সেই নির্দেশ বহাল রাখে দিল্লি হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টও একই মত প্রকাশ করে।
এরইমধ্যে ধর্ষণ ও খুনে দোষী সাব্যস্ত নাবালককে তিন বছর পর ছেড়ে দেওয়া হয়। যে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বিনয় শর্মা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েও পরে তা ফিরিয়ে নেয়। মুকেশ ও অক্ষয় ঠাকুরের মৃত্যুদণ্ড রদের আর্জি খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট।