জম্মু: সারা দেশ যখন দীপাবলীর আলোকে উদ্ভাসিত, তখন অন্ধকারে ডুবে জম্মু সীমান্তের গ্রামগুলি। সীমান্তের ওপার থেকে অবিরত ছুটে আসছে গুলি। প্রাণভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে গ্রামবাসীদের। পরিত্যক্ত গ্রামে রাতে হয়ত প্রহর জাগছেন কোনও বৃদ্ধ। সমকা, গোপাদ বস্তির মতো জম্মুর আরএস পুরা সেক্টরের গ্রামগুলিতে বিগত কয়েকদিন ধরেই সীমান্তের ওপার থেকে গুলি চালাচ্ছে পাক বাহিনী। প্রশাসন ওই সমস্ত এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। স্থানীয়দের নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে বলা হয়েছে।


কিন্তু এরইমধ্যে নিজের ভিটে আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন কেউ কেউ। বাড়ির পোষা গরু-বাছুর দেখভালের জন্য রয়ে গিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে একজন ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধ। রাতে বাড়ির বাইরে বেরোতে হলে অত্যন্ত সন্তর্পণে টর্চের আলোর উপরের অংশ ঢেকে বেরোতে হয় তাঁকে। যাতে সেই আলো ওপারে পাক রেঞ্জারদের চোখে না পড়ে। এখানকার আন্তর্জাতিক সীমান্তের ওপারে এক কিলোমিটারের মধ্যে ওত্ পেতে রয়েছে পাক বাহিনী।

বিপদের মধ্যেও ওই বৃদ্ধ গ্রাম ছাড়েননি। তিনি বললেন, ১৯৪৭-এর সময় তিনি খুব ছোট ছিলেন। কিন্তু ১৯৬৫ ও ১৯৭১-এর ভারত-পাক যুদ্ধের স্মৃতি এখনও তাঁর মনে টাটকা হয়ে রয়েছে। তাছাড়া, দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে  সীমান্তে গুলি বিনিময় তিনি অনেক দেখেছেন।

১৯৬৫ ও ১৯৭১-এর যুদ্ধের স্মৃতি রোমন্থন করে ওই বৃদ্ধ বলেছেন, সেই সময় এখানে রাস্তাঘাট ছিল না। দেশের সেনাবাহিনীর জন্য ট্রেঞ্চগুলিতে অস্ত্রশস্ত্র বয়ে নিয়ে যেতেন তাঁরা।

কিন্তু বিগত কয়েকদিন ধরে যে রকম গুলি চলছে, তা এর আগে কখনও হয়নি বলে ওই বৃদ্ধ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামগুলিকে নিশানা করে গুলি ছুঁড়ছে।

উরি সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়ে জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাডগুলি ধ্বংস করে দিয়ে এসেছিল। এরপর থেকেই পাকিস্তান ধারাবাহিকভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখায় গুলি চালাচ্ছে। ভারতীয় বাহিনী এর পাল্টা জবাব দিচ্ছে।

পাক বাহিনীর  ছোঁড়া  গুলি ও শেল এসে পড়ছে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে।

গোপাদ বস্তি গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দুরে খোলামাঠে অনেকের মতোই আশ্রয় নিয়েছেন এক গৃহবধূ। এই এলাকা পাক বাহিনীর গুলি-শেলের পাল্লার বাইরে। তিন সন্তানের জননী বছর ৩০-এর ওই গৃহবধু স্টোভ জ্বালিয়ে রান্নার ফাঁকে জানালেন, পাক শেলের আঘাতে তাঁদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তাই গত কয়েকদিন ধরে এখানেই রয়েছেন তাঁরা। রাতে ঠাণ্ডা বাড়লে কষ্ট হয়। কিন্তু স্বস্তি একটাই। এই এলাকায় পাক বাহিনীর ছোঁড়া শেল পৌঁছতে পারে না।

কিন্তু প্রাণ বাঁচলেও মাঠের ফসল নিয়ে দারুন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন গ্রামবাসীরা। কারণ, এই সময়টাই মাঠে ফসল পড়ে রয়েছে। ফসল বলতে বাসমতী চাল। কিন্তু পাক বাহিনীর গুলি চালানোর কারণে মাঠের ওই ফসল তুলতে পারছেন না তাঁরা। খেতে কাজের জন্য ভিন রাজ্য থেকে আসা মজুররা ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছেন। মাঠে পড়ে রয়েছে পেকে যাওয়া ধান-সোনার ফসল।

গোপাদ বস্তি গ্রামের এক কৃষক বললেন, ভারতের বেশি করে ক্ষতিসাধনের জন্যই এই সময়টাকে গুলি চালানোর জন্য বেছে নিয়েছে পাক বাহিনী।