সুরাত (গুজরাত): জিডিপি বৃদ্ধির হার জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে বেড়ে ৬.৩ শতাংশ হয়েছে। এটাকে স্বাগত জানাতে হবে। কিন্তু গত পাঁচটি ত্রৈমাসিক ধরে এই হারে পতনের যে প্রবণতা দেখা গিয়েছে, তা কাটিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এটা এখনই বলার সময় আসেনি। এমনই অভিমত মনমোহন সিংহের। এখানে বণিক মহলের এক সভায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অফিস (সিএসও) ইনফর্মাল অর্থাত্ মূল অর্থনীতির বাইরের সেক্টরে নোট বাতিল ও জিএসটির পুরোপুরি কী প্রভাব পড়েছে, তা হিসাবের মধ্যে ধরেনি বলে মনে করছেন কোনও কোনও অর্থনীতিবিদ, অথচ ইনফর্মাল সেক্টর অর্থনীতির ৩০ শতাংশ। এম গোবিন্দ রাও ও ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকাল কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রণব সেনকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, জিডিপি বৃদ্ধি নিয়ে এখনও ভালরকম সংশয় রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০১৭-১৮ বর্ষে বৃদ্ধির হার থাকবে ৬.৭ শতাংশ। কিন্তু ৬.৭ শতাংশে বৃদ্ধি হলেও মোদীজীর চার বছরের শাসনে গড় বৃদ্ধির হার হবে মাত্র ৭.১ শতাংশ। মোদী সরকার ইউপিএ জমানার ১০ বছরের গড় বৃদ্ধির হার ছুঁতে পারবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
মনমোহন বলেন, ইউপিএ আমলের ১০ বছরের গড় ছুঁতে হলে অর্থনীতিকে পঞ্চম বর্ষে ১০.৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এটা হলে খুশিই হব, কিন্তু বাস্তবে হবে বলে মনে করি না।
জিডিপি বৃদ্ধির হার পাঁচটি ত্রৈমাসিকে শ্লথ হয়ে পড়ে। সেই ধারা কাটিয়ে জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্র চাঙ্গা হওয়ার সুবাদে সেই হার বেড়ে হয়েছে ৬.৩ শতাংশ। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ বর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার বিমুদ্রাকরণের জেরে কমে ৫.৭ শতাংশ হলেও তাতে পুরো ছবিটা আসেনি কেননা জিডিপি-র মধ্যে ইনফর্মাল সেক্টরের ক্ষতিটা ধরা হয়নি। বছরে প্রতি ১ শতাংশ জিডিপি হ্রাসের জেরে দেশের লোকসান হয় ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা। মানবজীবনে তার প্রভাবটাও ভাবা উচিত। কর্ম সংকোচন, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়া, উদ্যোগী শিল্পপতিদের আশা নিরাশায় পর্যবসিত হওয়া।
নরেন্দ্র মোদী তাঁর নিজের রাজ্যের মানুষের ওপর নোট বাতিল, জিএসটি-র 'যন্ত্রনা' যে বোঝা চাপাতে চলেছে, তা বুঝতে ব্যর্থ বলেও মন্তব্য করেন মনমোহন। নোট বাতিলকে আগে থেকে কিছু না জানিয়ে চালানো আক্রমণ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা তড়িঘড়ি চালু করে দেওয়া হল, ভালমতো ভাবনাচিন্তা না করেই। শাসক দল নীচু মানের বাগাড়ম্বর করছে বলে মন্তব্য করেও দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, আশা করব, প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভোট চাইতে, তাদের কাছে টানতে আরও বিবেচনাপ্রসূত পন্থা নেবেন।