নয়াদিল্লি: এক কামরার এক চিলতে কুঁড়ে ঘরটায় দরজা লাগানোর কোনও বালাই নেই। দরজার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে পোষা মুরগীগুলো। ঘরের ভেতরটা ছ্ন্নছাড়া। মাটির দেওয়ালে সস্তার ফ্রেমে বাঁধানো এক মহিলার ছবিতে ঝুলছে মালা। ওই মহিলাই দানা মাঝির প্রয়াত স্ত্রী। দানা মাঝি। হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে কিশোরী মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে তুলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। সেই ছবি প্রকাশ্য আসার পর দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছেন। এই অমানবিক ঘটনার সারা দেশকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। ওড়িশার কালাহান্ডির দানা মাঝির প্রতি সহানুভূতি, সরকারি উদাসীনতা নিয়ে সরব হয়েছিলেন অনেকেই। ঘটনার পর সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন দানা মাঝি। গতকাল বাহারিনের রাজার পক্ষ থেকে ৮.৮৭ লক্ষ টাকা দানা মাঝিকে দেওয়া হয়েছে।

এভাবে তাঁর কাছে যে আর্থিক সাহায্য আসছে, তা কীভাবে কাজে লাগাবেন দানা মাঝি? তিনি বলছেন, স্ত্রী তো আর নেই। কিন্তু আর্থিক সাহায্য পেয়ে বাবা হিসেবে তিনি অনেকটাই ভারমুক্ত। দিল্লিতে বাহারিনের রাজার চেক প্রদান অনুষ্ঠানে দানা মাঝি বলেছেন, তাঁর মেয়েদের এবার উপযুক্ত শিক্ষিত করে তুলতে পারবেন তিনি। তিনি চান, তাঁর এক মেয়ে ডাক্তার হোক, যাতে সে গ্রামের মানুষের সেবা করতে পারে। অন্য দুই মেয়েকে পুলিশ বা কোনও সরকারি চাকরিতে দেখতে চান দানা মাঝি।

সংবাদমাধ্যমের সামনে একেবারেই স্বচ্ছন্দ ছিলেন না দানা মাঝি। সারি সারি ক্যামেরা-বুম দেখে আরও গুটিয়ে যান তিনি। এরইমধ্যে তিনি বলেন, কালাহান্ডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিনি অনেকবারই স্ত্রীর দেহ নিয়ে যেতে গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু হতদরিদ্র দানা মাঝির কথায় কর্ণপাত করেনি কেউ। বাধ্য হয়েই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন স্ত্রীর মরদেহ।

ভুবনেশ্বরের উপজাতি স্কুল কলিঙ্গ ইন্সস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স (কেআইএসএস) দানা মাঝির তিন কন্যাসন্তান চান্দিনি (১৩), সোনাই (৭) এবং প্রমীলা (৪)-কে ভর্তি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কেআইএসএস-এর আর্থিক সহায়তাতেই দানা মাঝি বাহারিনের রাজার পাঠানো আর্থিক সাহায্য নিতে দিল্লিতে এসেছিলেন।

কিন্তু স্কুলে পড়তে গ্রাম থেকে অনেক দূরে ভুবনেশ্বরে থাকতে হবে দানা মাঝির তিন কন্যাকে। দানা মাঝি থাকবেন বাড়িতেই। একলা।