নয়াদিল্লি: কাশ্মীরে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া হিংসার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করল ভারত। সীমান্তের ওপার থেকে শুধু সন্ত্রাসবাদীদের অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টাই নয়, উপত্যকায় অশান্তি ছড়ানোর ক্ষেত্রেও পাক মদত রয়েছে বলে অভিযোগ ভারতের।


 

এদিকে, কাশ্মীরে জনজীবন এখনও স্বাভাবিক না হলেও বৃহস্পতিবার আর নতুন করে কোনও বড় অশান্তি হয়নি। কয়েকটি জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীদের দিকে পাথর ছোঁড়া হয়েছে। তবে গোলমাল বাড়েনি। এরই মধ্যে অবশ্য সংঘর্ষে আহত হওয়া এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে এদিন। গত ৯ জুলাই কুলগাম জেলার তুলি নূরপোরা গ্রামে নিজেদের বাড়ির বাইরে ইরফান আহমেদ দার নামে ওই তরুণকে নিরাপত্তারক্ষীরা মারধর করেন বলে অভিযোগ। রক্তক্ষরণ হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল ইরফানের। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে সাম্প্রতিক অশান্তির জেরে ৩৮ জনের মৃত্যু হল।

 

কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এদিন পাকিস্তানকে তোপ দেগেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ। তাঁর দাবি, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার নেই পাকিস্তানের। কাশ্মীরে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা উচিত তাদের। আন্তর্জাতিক মহল জানে, কোন দেশ কাদের অংশ দখল করে আছে। তাই পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মহলে যতই পাকিস্তানের বিষয়টি সরব হোক না কেন, তাতে লাভ হবে না। পাকিস্তান যতই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, তাতে বিষয়টির কোনও বদল হবে না। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, পাক সরকারের নীতির অংশ হল সন্ত্রাসবাদ।

 

পাকিস্তানে ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল সেদেশের বিদেশ মন্ত্রক। এ বিষয়ে স্বরূপ বলেছেন, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কাশ্মীরের বিষয়টি ভারতের নিজস্ব। রাজনৈতিক বিচারের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত। ইসলামাবাদে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলবের পাল্টা হিসেবে ভারতে পাক রাষ্ট্রদূত আব্দুল বাসিতকে তলব করা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন স্বরূপ।

 

কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ডাকা বনধ এবং কার্ফুর মতো পরিস্থিতির জেরে টানা ৬ দিন ধরে জনজীবন স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। রাস্তাঘাটে যানবাহনের দেখা মিলছে না। শ্রীনগরের কিছু অংশ, উত্তর কাশ্মীরের কয়েকটি অঞ্চল এবং দক্ষিণ কাশ্মীরের চারটি জেলায় শনিবার সকাল থেকেই সাধারণ মানুষের চলাফেরার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল। সেই নিয়ন্ত্রণ এখনও জারি আছে। দোকান-পাট, বিভিন্ন বেসরকারি দফতর, বাণিজ্য কেন্দ্র, পেট্রোল পাম্প এদিনও বন্ধ ছিল। সরকারি দফতর এবং ব্যাঙ্ক খোলা থাকলেও উপস্থিতির হার ছিল নগণ্য। গরমের ছুটি চলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি এমনিতেই বন্ধ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বোর্ডের পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। অনেকে বিয়ে পর্যন্ত বাতিল করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে সারছেন। সবমিলিয়ে চলতি অশান্তির ফলে ভূ-স্বর্গের স্বাভাবিক চেহারাটাই হারিয়ে গিয়েছে।