পুলওয়ামা (জম্মু ও কাশ্মীর): সোমবার গভীর রাতে লস্কর-ই-তৈবার কাশ্মীর প্রধান আবু দুজানাকে খতম করে উত্তর কাশ্মীরের এক অজ্ঞাত স্থানে কবর দিয়ে দেওয়া হয়। আর এই অভিযানের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে মার্কিন কম্যান্ডো অভিযানের গল্প।
অভিযানে অংশ নেওয়া এক সেনা অফিসার জানান, প্রথম থেকেই একটা ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম। তা হল, যা করতে হবে, রাতের আঁধারেই। তাই ১২ বার পুলিশের হাত থেকে ফস্কে যাওয়া দুজানাকে কব্জা করতে আর সামান্যতম ফাঁকফোকর রাখতে রাজি হয়নি নিরাপত্তাবাহিনী।
কেমন করে হল দুজানা-নিকেশ? অভিযানের বিশদ জানাতে গিয়ে ওই অফিসার বলেন, সময়টা ছিল সোমবার মধ্যরাত। হঠাৎ, নিরাপত্তা আধিকারিকদের কাছে একটি ফোন আসে। এক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, লস্করের কাশ্মীর প্রধান দুজানা দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় একটি বাড়িতে আত্মগোপন করে রয়েছে।
কালক্ষেপ না করে নিরাপত্তা আধিকারিকরা অভিযানের পরিকল্পনা শুরু করে দেন। আর এই পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ২০১১ সালে আল কায়দা প্রধানকে হত্যা করার অভিযানের প্রেক্ষাপটে তৈরি হলিউড ছবি ‘জিরো ডার্ক থারটি’।
আধিকারিকরা সিদ্ধান্ত নেন, ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে যেভাবে রাতের অন্ধকারে ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে অভিযান চালিয়েছিল মার্কিন নৌসেনার উচ্চপ্রশিক্ষিত নেভি সিল-রা, ঠিক তেমনই নিশুতি থাকতে থাকতেই এই অভিযান চালাতে হবে। যাতে কোনওভাবে এবার দুজানা আর পালানোর সুযোগ না পায়। সেইমতো, অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে একটি স্পেশাল অপারেশন্স গ্রুপ (এসওজি) গঠন করা হয়। অভিযান সম্পর্কে ব্রিফিং করা হয়।
ওই আধিকারিক জানান, সূত্রের খবর অনুযায়ী, পুলওয়ামায় লস্করের আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত নেভা সংলগ্ন হাকরিপুরায় একটি বাড়িতে এসে উঠেছিল ২০ বছরের দুজানা। সঙ্গে ছিল তার সহযোগী আরিফ ভট্ট। যে বাড়িতে তারা উঠেছিল, তা এক মহিলার। সূত্রের খবর, ওই মহিলাকে বিয়ে করেছিল দুজানা।
বিশ্বস্ত সূত্রের খবর মিলতেই, এসওজি-কে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হাকরিপুরায়। ওই আধিকারিক জানান, যেহেতু, বাড়ির বাসিন্দারা সাধারণ নাগরিক ছিল, তাই তাদের বাঁচানোটাও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সবগদিক ভেবেই, এগোয় বাহিনী।
জানা গিয়েছে, গোটা অভিযানে এসওজি ছাড়াও অংশ নেয় কাশ্মীর পুলিশের বিশেষ দল, সেনাবাহিনীর ভিক্টর ফোর্স এবং সিআরপিএফ-এর ১৮২ ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা। রাতের অন্ধকারে চুপিসাড়ে একদল বাড়িটি ঘিরে ফেলে। অন্যরা এলাকায় বহুস্তরীয় কর্ডন তৈরি করে।
প্রথমে পুলিশের একটি ক্র্যাক টিমকে পাঠানো হয়। তাদের দেখেই এলোপাথারি গুলিবর্ষণ শুরু করে দুজানা ও আরিফ। সেই ফাঁকে, পিছন দিয়ে বাড়িতে ঢুকে আবাসিকদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই কাজ সম্পন্ন করে এসওজি। এরপর দুই জঙ্গির বিরুদ্ধে অল-আউট ফায়ারিং শুরু করে বাহিনী।
কয়েকঘণ্টা ধরে গুলি বিনিময়ের পর দুই জঙ্গির মৃত্যু হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাদের দেহ উত্তর কাশ্মীরের একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে কবর দিয়ে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, বিদেশি জঙ্গিদের সেখানেই কবর দেওয়া হয়। গোটা প্রক্রিয়া শেষ হয় ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে। তবে তার আগে দুজানার পরিচয় নিশ্চিত করতে তার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়।