নয়াদিল্লি: ভোপাল সেন্ট্রাল জেল থেকে পলাতক ৮ সিমি জঙ্গির পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তুলেছে কংগ্রেস ও সিপিএম। পাল্টা বিজেপি-র দাবি, কংগ্রেস সিমি জঙ্গিদের সমর্থন করছে এবং এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করছে।

মধ্যপ্রদেশ পুলিশের আইজি যোগেশ চৌধুরী ভুয়ো সংঘর্ষে জঙ্গিদের মৃত্যুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, জঙ্গিরা প্রথমে গুলি চালাতে শুরু করে। তাদের গুলিতে তিন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ পাল্টা জবাব দেয়। ৪৫-৪৬ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। তাতেই জঙ্গিদের মৃত্যু হয়েছে।

মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান বলেছেন, তাঁরা এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে জেল থেকে পালানো সিমি জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক যোগ খতিয়ে দেখার জন্য এনআইএ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কারাগারের কোনও আধিকারিকের গাফিলতি ছিল না তার তদন্তভার দেওয়া হচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত ডিজিপি নন্দন দুবেকে। তদন্তে যদি কারও দোষ প্রমাণিত হয়, তাহলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রবিবার রাত দুটো থেকে তিনটের মধ্যে ভোপাল সেন্ট্রাল জেল থেকে পালায় ৮ জঙ্গি। পালানোর সময় জেলের প্রধান রক্ষী রমাশঙ্করকে গলা কেটে খুন করে তারা। স্টিলের থালা ও গ্লাস দিয়ে রক্ষীর গলা কেটে খুন করা হয়। এরপর বিছানার চাদর পাকিয়ে দড়ি বানিয়ে জেলের পাঁচিল টপকায় জঙ্গিরা। মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা ৮ সিমি জঙ্গির বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে জেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা। মধ্যপ্রদেশ সরকারের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সাসপেন্ড করা হয়েছে জেল সুপার-সহ সমস্ত আধিকারিককে।

এই ঘটনা নিয়ে মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সাংসদ কমলনাথ বলেছেন, ‘আমি এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। নিহতরা কোন পরিস্থিতিতে পালিয়েছিল সেটা সরকারের অবশ্যই জানা উচিত। এরকম অপরাধের রেকর্ড থাকা জঙ্গিরা কী করে উচ্চ নিরাপত্তাযুক্ত জেল থেকে পালিয়ে গেল এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গুলিতে নিহত হল সেটা রাজ্য ও দেশের মানুষের জানা উচিত।’

সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্যা বৃন্দা কারাটের অভিযোগ, ‘এই ঘটনার সরকারি ব্যাখ্যা অত্যন্ত সন্দেহজনক। রাজ্য সরকার এবং পুলিশ পরস্পর-বিরোধী কথা বলছে। সেই কারণে সত্যিটা জানার জন্য হাইকোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে স্বাধীন তদন্ত হওয়া জরুরি। সেই তদন্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হওয়া দরকার। কারণ, কেউই এই ঘটনার নির্মিত ব্যাখ্যা বিশ্বাস করছেন না।’

বিরোধীদের এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়ে বিজেপি মুখপাত্র জিভিএল নরসিংহ রাও বলেছেন, ‘কংগ্রেস যেভাবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, সেভাবেই এবারও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির স্বার্থে একই কাজ করছে। নিরাপত্তারক্ষীদের মনোবলে ধাক্কা দিচ্ছে কংগ্রেস। আমি বুঝতে পারছি না, এই ধরনের জঙ্গিদের হয়ে কথা বলছে কংগ্রেস। সংঘর্ষ নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। কিন্তু কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করে চলেছে। তারা যেভাবে সংঘর্ষ নিয়ে রাজনীতি করছে এবং একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের উপর নজর দিচ্ছে সেটা যথেষ্ট উদ্বেগের। লস্কর-ই-তৈবা এবং জেল থেকে পালানো সিমি জঙ্গিরা নিহত হলে তবেই কংগ্রেস উদ্বেগ প্রকাশ করে। জঙ্গিদের সমর্থনে কংগ্রেসের সরব হওয়া কৌতূহল জাগাচ্ছে।’