নয়াদিল্লি: সংসদে বিরোধীদের ‘কণ্ঠরোধ’ করা হচ্ছে বলে দাবি করল তৃণমূল কংগ্রেস। এই মর্মে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডুকে চিঠি দিল বিরোধী দলগুলি। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, উচ্চকক্ষে তাদের বক্তব্য পেশ না করতে দিয়ে ‘গণতন্ত্রের হত্যা’ করছে কেন্দ্র।
মালদা প্রশাসনকে পাঠানো রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে এদিন সংসদে সোচ্চার হয় তৃণমূল। প্রসঙ্গত, গত ৩১ জানুয়ারি মালদার ডিভিশনাল কমিশনারকে একটি চিঠি পাঠান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর অতিরিক্ত মুখ্য সচিব। চিঠিতে তিনি বলেন, রাজ্যপালের ইচ্ছা, ৬ ডিসেম্বর সার্কিট হাউসের বৈঠকে মুর্শিদাবাদের আইজি উপস্থিত থাকুন।
বৈঠকে কী কী নিয়ে আলোচনা হবে, তারও উল্লেখ করা হয় রাজ্যপালের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের চিঠিতে। তালিকায় ছিল, রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্প, কেন্দ্রের উন্নয়নমূলক প্রকল্প, গ্রামীণ এলাকায় এনজিও-র উন্নয়নমূলক কর্মসূচি এবং সীমান্তবর্তী সহ অন্যান্য জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। বৈঠকে মুর্শিদাবাদের আইজিকে উপস্থিত থাকার কথাও বলা হয়েছিল।
রাজভবনের তরফে পাঠানো এই চিঠি নিয়ে মঙ্গলবার এমনই উত্তপ্ত হয় সংসদ। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে লোকসভা, রাজ্যসভায় সুর চড়ায় তৃণমূল। তৃণমূলের অভিযোগ, রাজ্যপাল সরাসরি জেলা প্রশাসনকে চিঠি লিখতে পারেন না। উভয়কক্ষে নোটিস দিয়ে আলোচনার দাবিও জানায় তারা। নোটিসে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়েও আলোচনার কথা বলা হয়েছিল। এই ইস্যুতে পাশে দাঁড়ায় অন্য বিরোধীরাও।
এদিন সভার কাজ শুরু হতেই লোকসভা এবং রাজ্যসভায় মুলতুবি প্রস্তাব চেয়ে নোটিস দিয়েছিল তৃণমূল। লোকসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনা হলে তৃণমূলের প্রস্তাব খারিজ করে দেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। রাজ্যসভায় ইস্যুটি তোলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। কিন্তু, সেখানেও চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু আলোচনার প্রস্তাব খারিজ করে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুলতুবি হয়ে যায় সভা।
এরপর সংসদের বাইরে এরপর ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূল সাংসদরা। রাজ্যপাল কী করে আইজি-কে বৈঠকে ডাকতে পারেন, এই প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার সংসদে সরব হন দীনেশ ত্রিবেদী। বলেন, সুপার সিএম হওয়ার চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল। সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, রাজ্যপাল কেন্দ্রের এজেন্টের মতো কাজ করছেন। ধারা ধরে বলেছে রাজ্যপাল কীভাবে কাজ করবে। ত্রিপুরা, কেরল, তামিলনাড়ুতেও হচ্ছে।
সভা মুলতুবি হওয়ার পর একাধিক বিরোধীদলের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়েছে অন্য বিরোধী দলগুলি। তাদের দাবি, তাদের আনা কোনও প্রস্তাবই গৃহীত হচ্ছে না। এনিয়ে এদিন একজোট হয়ে বৈঠক করে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, সিপিআই, সমাজবাদী পার্টি, বিজু জনতা দল, আম আদমি পার্টি।
একদফা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর এদিন রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হলে সেখানেও ফের সুর চড়ায় বিরোধীরা। সেখানে বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, আমাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। এভাবে করলে হাউসে থাকব না। বিরোধীদের বৈঠকেই এদিন বেঙ্কাইয়া নাইডুকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপরই, রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠায় বিরোধীরা।
বুধবারও ফের বৈঠক ডেকেছে বিরোধীরা। সেখানেই পরবর্তী রণকৌশল স্থির করা হবে। বুধবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে সংসদ চত্বরে ফের তৃণমূলের ধর্না কর্মসূচিও রয়েছে।