নয়াদিল্লি: নাগপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনায় দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। চিদম্বরমের দাবি, নোট বাতিল আসলে গরীবদের ওপর সবচেয়ে জঘন্য আক্রমণ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উচিত্ ব্যাঙ্ক ও এটিএমগুলোর বাইরে গিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা। এছাড়াও তাঁর দাবি, গত ৮ নভেম্বরের বৈঠকের প্রতিমুহূর্তের বিস্তারিত তথ্য সকলের সামনে প্রকাশ করুক আরবিআই। দেশের আমজনতার জানার অধিকার আছে, সেদিনের বৈঠকে মোদীর সঙ্গে কোন কোন ডিরেক্টর উপস্থিত ছিলেন।


চিদম্বরম দাবি করেছেন, তাঁর কাছে এখনও দুহাজারের নোট নেই। অথচ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আয়কর দফতর ও পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেছে, যার অনেকটাই নতুন দুহাজারের নোটের বান্ডিল। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর প্রশ্ন যেখানে সারা দেশে নগদের এত হাহাকার সেখানে কিছু লোকের হাতে এই টাকা আসছে কীভাবে? তিনি কেন্দ্রের কাছে জানতে চান, আরবিআই থেকে নির্দেশিকার জারি করে বলা হয়েছে প্রত্যেককে ব্যাঙ্ক থেকে সপ্তাহে ২৪ হাজার করে তুলতে পারবে। কিন্তু ব্যাঙ্কে যদি নগদ মজুত না থাকে, তাহলে সেই টাকা লোকে পাবে কীভাবে? চিদম্বরমের প্রশ্ন এই সমস্ত সিদ্ধান্ত কেন্দ্র কী পরিকল্পনা করে নিয়েছিল?

৮ নভেম্বর কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে মোদী সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসেবে আখ্যা দেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ওই একই সুর শোনা গেছে চিদম্বরমের গলাতেও। তাঁর দাবি, যখন ব্যাঙ্কগুলো একাধিকবার দাবি করছে তাদের কাছে কোনও নগদ নেই, তখন কীভাবে সরকার বলছে ব্যাঙ্কে টাকা আছে।

এছাড়া জেলা সমবায় ব্যাঙ্কগুলোকে কেন এই পুরো কার্যকলাপের বাইরে রাখল কেন্দ্র, প্রশ্ন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর। তিনি মনে করেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কৃষকরা। তাঁদের হাতে নগদ নেই, বীজ, সার কেনার জন্যে টাকা নেই। চিদম্বরমের দাবি, নোট বাতিলের জেরে নগদের অভাবে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা দিন মজুরদের। দেশের ৪৫ কোটি জনসাধারণ এই সিদ্ধান্তের জেরে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

দেশের সমস্ত অর্থনীতিবিদরা এই সিদ্ধান্তের একযোগে সমালোচনা করেছে। সঠিক প্রস্তুতি ছাড়া এই সিদ্ধান্ত নেওয়াই উচিত্ হয়নি কেন্দ্রের, মত প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর।

দেশের জিডিপিতেও এর প্রভাব সুদূর প্রসারী। কেন্দ্রের দাবি, গরিবরা উপকৃত হবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে, এবং সমস্যায় পড়বে বড়লোকেরা, সেকথাও উড়িয়ে দিয়েছেন চিদম্বরম। তাঁর মত, এখনও অবধি সরকারের এই সিদ্ধান্তে কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তিকে  প্রভাবিত হতে দেখা যায়নি।