শ্রীনগর: জম্মুর বাসমতী চালের ক্ষেত টার্গেট করেছে পাকিস্তান। ভারতীয় কৃষক ও ক্ষেতের ফসলের ওপর এবার শেল দাগছে তারা। চাষীদের ট্রাক্টরের শব্দ শোনা গেলেই ওপার থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে নাগাড়ে গুলি-মর্টার বর্ষণ। দেশের ‘শস্যভাণ্ডার’ বলে পরিচিত, জম্মুর আরএস পুরা এলাকার ওপর এভাবেই পাক হামলা চলছে।


ক্রমাগত পাক হামলার জেরে জম্মু কাশ্মীরের ৪০,০০০ একর বাসমতী ক্ষেতে যেতে পারছেন না কৃষকরা। আন্তর্জাতিক সীমান্তের এপারে বাসমতী চাষ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান যেভাবে বাসমতী ক্ষেত ধ্বংস করছে, কৃষকদের আশঙ্কা, ১২৫ কোটি টাকার মত ফসলের ক্ষতি হতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, অক্টোবর-নভেম্বর মাস নাগাদ প্রতি বছর হামলা চালায় পাকিস্তান। তাদের লক্ষ্য থাকে চাষীদের ক্ষতি করে বাসমতী চালের ক্ষেত ধ্বংস করা, যাতে পাকিস্তানের শস্য আন্তর্জাতিক বাজারে ভাল বিক্রি হয়। ফলে আতঙ্কিত চাষীরা অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন, বিস্তীর্ণ ধানজমি অরক্ষিত, ফাঁকা পড়ে রয়েছে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, পাকিস্তানের ধানজমির ফসল কয়েক সপ্তাহ আগেই কেটে নেওয়া হয়েছে। তারপর পরিকল্পিতভাবে ভারতের ফসল ক্ষেতের ওপর হামলা চালাতে শুরু করেছে তারা। যদি এখনই ফসল কাটা না যায়, তবে ১০-১২দিনের মধ্যে ক্ষেতেই তা নষ্ট হয়ে যাবে।

আরএস পুরার বেশিরভাগ এলাকাই অত্যন্ত উর্বর ও বাসমতী চাষের পক্ষে আদর্শ। কিন্তু গত ৩ বছর ধরে ওপারের গুলি-মর্টার বর্ষণে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বাসমতী চাষ বন্ধ করতে বাধ্য হবেন কৃষকরা। আর তা বড়রকম প্রভাব ফেলবে ভারতীয় অর্থনীতির ওপর, যেহেতু বাসমতী রফতানির মাধ্যমে বিপুল বিদেশি অর্থ আসে এ দেশে। আরএস পুরার বাসমতী চালের আমেরিকায় বিরাট বাজার রয়েছে।

দেখা যাক পরিসংখ্যান। প্রতি হেক্টর উর্বর জমিতে চায হয় অন্তত ২০ কুইন্টাল বাসমতী। উচ্চ গুণমানের ১ কুইন্টাল বাসমতী চালের দাম ৩,২০০-৩,২৫০০ টাকা। অর্থাৎ কাগজ কলম নিয়ে হিসেব না কষেও বলা যা, ধান এখনই কাটতে না পারলে ক্ষতি হবে অন্তত ১২৫ কোটি টাকার, কারণ এই এলাকার বাসমতী বিক্রি করে রাজস্বের পরিমাণ ১২৫ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক বাসমতী বাজারে ভারতের ভূমিকা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। ৬৫ শতাংশ বাসমতী চাল এ দেশে উৎপন্ন হয়। সরকারি আধিকারিকরাও জানাচ্ছেন, কেন্দ্রের এখনই উচিত উপযুক্ত পদক্ষেপ করে দেশের এই মূল্যবান সম্পদ পাক হামলার হাত থেকে রক্ষা করা।

তা ছাড়া এইসব এলাকার চাষীদের জন্য কোনও ফসল বিমার ব্যবস্থা না থাকায় তাঁদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। অন্যান্যা রাজ্য সরকাররা ফসল নষ্ট হলে কৃষকদের পুরোপুরি ক্ষতিপূরণ দেয় কিন্তু জম্মু কাশ্মীরের চাষীরা কিছুই পান না।

তা ছাড়া এলাকায় বিএসএফ মোতায়েন থাকায় চাষবাসে যন্ত্রের ব্যবহার করতে দেয় না তারা। ফলে বলদ দিয়ে চাষ করতে সময় লাগে অনেক বেশি। অন্তত ২০ শতাংশ ফসল এতে নষ্ট হয়ে যায়।

জম্মু কাশ্মীরের কৃষিমন্ত্রীও মেনে নিয়েছেন, এ বছর ফসলের ক্ষতি হবে। এখন যেহেতু আর সব ফসল তোলার যথেষ্ট সময় নেই, তাই বহু ফসল মাঠেই নষ্ট হবে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। তবে তাঁর আশ্বাস, কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে তাঁদের পূর্ণ সুরক্ষা দেওয়া হবে, তাঁদের জন্য ক্ষতিপূরণেরও চেষ্টা চলছে। সামনের বছর থেকে ফসল বিমা চালু হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।