বেঙ্গালুরু: ২০ বছরের তরুণী কন্যা সুষমার মুখে বিষ ঢেলে দিল বাবা। এরপর মেঝেতে পড়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখল মেয়েকে। পরে পুলিশকে জানাল, ভিন জাতের ছেলের সঙ্গে প্রেম এবং তাকে বিয়ে করতে চাওয়ার মেয়েকে এই সাজা দেওয়া হয়েছে।
মহিশূরের ১৫ কিমি দূরে গোল্লানবিড়ু গ্রামে এই ভয়াবহ অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। সুষমার মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। গত ২০ জুন সুষমাকে বাড়িতে ডেকে পাঠিয়ে বিষ খাইয়ে হত্যা করে পরদিন গোপনে তাঁর দেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। এই ঘটনার পর পরিবারের সম্মান রক্ষায় হত্যার জল্পনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
সুষমার বাবা কুমার গৌড়া কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। সুষমার মা ও মামার খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। ওই দুজন কুমার গৌড়াকে মেয়েকে খুন ও তথ্যপ্রমাণ লোপাটে মদত করেছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এন রুদ্রমণি জানিয়েছেন, এক দলিত চিত্রশিল্পী যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুষমার। পরিবারের এতে প্রবল আপত্তি ছিল। সুষমা বাবা-মায়ের তিন কন্যার মধ্যে সবার বড়। কলেজে পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেননি তিনি। গত বছরের ডিসেম্বরে কুমার গৌড়া ও পরিবারের সদস্যরা এবং পঞ্চায়েতের লোকজন সুষমাকে ওই দলিত যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার জন্য বোঝায়। কিন্তু সুষমা তাদের কথা মানতে না চাওয়ায় তাঁকে মান্ড্য জেলায় এক আত্মীয়র বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনবার তাঁকে বাড়িতে ডেকে পরিবারের সদস্যদের পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ের জন্য বোঝানো হয়। কিন্তু সুষমা বাড়ির লোকেদের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। এতে তাঁর বাবা কুমার গৌড়া ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ফের তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু এবার হেস্তনেস্ত করার মানসিকতা নিয়ে তৈরি ছিল গৌড়া পরিবারের।
জানা গেছে,সুষমার মা তাঁকে বিষাক্ত তরল মেশানো কমলালেবুর রস খেতে দেন।সুষমা তা একটু খেয়ে আর খাননি। এই কৌশল ব্যর্থ হওয়ায় কুমার গৌড়া ও তাঁর স্ত্রী এবং শ্যালক মিলে সুষমার নাক চেপে ওই তরল তাঁর মুখে ঢেলে দেয়।
রুদ্রমণি জানিয়েছেন, সুষমাকে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পরিবারের খামার বাড়িতে ওই বিষাক্ত তরল খাওয়ানো হয়। ভোর চারটে নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। প্রায় ছয় ঘন্টা মাটিতে পড়ে মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করেন তিনি। মৃত্যুর পর খামারেই গোপনে দাহ করা হয়।
রুদ্রমণি জানিয়েছে, ওই তরুণীর দেহাবশেষ ও অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করেছে পুলিশ।
এই অপরাধের ঘটনাটি হয়ত গোপনই থেকে যেত। কিন্তু বিট কনস্টেবল রবি জল্পনা শুনে তাঁর উর্দ্ধতন আধিকারিকদের বিষয়টি জানান।
গত বুধবার এই ঘটনায় হেগ্গাদাদেভানা কোটে থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। গৌড়া স্ত্রী ও শ্যালকের সাহায্যে মেয়েকে খুনের কথা কবুল করেছে বলে দাবি পুলিশের। এভাবে মেয়েকে খুন করে আদৌ অনুতপ্ত নয় গৌড়া।