কেন্দ্রপাড়া (ওড়িশা): হাসপাতালের বিল না মেটাতে পারায়, নিঃসন্তান দম্পতিকে নিজেদের সদ্যোজাত কন্যাকে বেচতে বাধ্য হলেন বাবা-মা! মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া জেলায়।
এরপরই, গ্রামের সরকার অনুমোদিত সমাজ-স্বাস্থ্যসেবক(আশা) কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশে এফআইআর দায়ের করেন শিশুর বাবা নিরাকার মহারাণা। তাঁর অভিযোগ, ওই কর্মী নিজ উদ্যোগে তাঁদের একটি নার্সিং হোমে নিয়ে যান। সেখানে বিল না মেটাতে পারায়, তাঁদের শিশুসন্তানকে বেচে দেওয়ার পরামর্শ দেয় নার্সিং হোম। যদিও, এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের তৃতীয় সন্তানের জন্মের জন্য গত ৩০ জুলাই জেলা সদর হাসপাতালে গিয়েছিলেন জেলার রাজনগর মহকুমার অন্তর্গত রিঘাগাড়া গ্রামের বাসিন্দা মহারাণা ও তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি। অভিযোগ, যে আশা কর্মী তাঁদের সঙ্গে গিয়েছিলেন, তিনি এই গীতাঞ্জলিকে নার্সিং হোমে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। মহারাণার দাবি, ওই আশা কর্মী দাবি করেন, হাসপাতালের চেয়ে সুব্যবস্থা ও উন্নত পরিষেবা মিলবে সেখানে।
গত ১ অগাস্ট, কন্যা সন্তানের জন্ম দেন পেশায় দিনমজুর মহারাণার স্ত্রী গীতাঞ্জলি। মহারাণার দাবি, তাঁর ধারনা হয়েছিল, সরকারি হাসপাতালের মতো নার্সিং হোমেও নিখরচায় চিকিৎসা মিলবে। কিন্তু, তাঁকে সাড়ে সাত হাজার টাকার বিল মেটাতে বলা হয়। মহারাণা বলেন, আমার কাছে সেই সময় এক হাজার টাকাও ছিল না। তাঁর অভিযোগ, নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, টাকা না মেটানো হলে, রোগীকে ছাড়া হবে না।
মহারাণার অভিযোগ, এরপর নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ তাঁকে শিশুকে বেচে দেওয়ার পরামর্শ দেয়। তারা জানায়, কোনও নিঃসন্তান দম্পতিকে শিশু বেচে টাকা তুলে নিতে। মহারাণা জানান, কোনও বিকল্প পথ না দেখে তিনি চাপের কাছে নতিস্বীকার করে সদ্যোজাতকে সম্মত হন। জানান, এতে তাঁর স্ত্রী প্রবল আপত্তি জানায়। কিন্তু, তা সত্ত্বেও তিনি নিজের শিশুকে বেচে দেন।
এফআইআর-এ মহারাণা অভিযোগ করেন, নার্সিং হোম আশ্রিত মিডলম্যানদের মাধ্যমে তাঁর সন্তানকে এক দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হয়। সদ্যোজাত কন্যা হারানো মহারাণার দাবি, ওই আশা কর্মী তাঁদেক বিপথে চালিত করেছেন। বিবেক না চাওয়া সত্ত্বেও তিনি ওই কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি জানান, শিশু-বিক্রি চক্রে জড়িতরা যাতে ছাড়া না পায়, তার জন্যই তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন।
অভিযোগ পেয়েই তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কেন্দ্রপাড়া থানার ইন্সপেক্টর বিজয় কুমার বিশি জানান, জুভেনাইল জাস্টিস আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭২ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি যোগ করেন, যে দম্পতি মহারাণা ও গীতাঞ্জলির শিশুকন্যাকে কিনেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে। শিশুটিকে উদ্ধার করা এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।