নয়াদিল্লি: পাকিস্তানকে কাশ্মীরে হিংসা, অশান্তির জন্য দায়ী করার পাশাপাশি উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকল কেন্দ্রের এনডিএ সরকার। রাজ্যসভায় বুধবার দলমত নির্বিশেষে সদস্যরা রাজ্যে শান্তি কায়েম করার ব্যাপার রাজনৈতিক সমাধানসূত্র খুঁজে বের করার দাবি জানান। তাঁরা কাশ্মীর নিয়ে প্রথমে সর্বদল বৈঠকে আলোচনা করে উপত্যকায় একটি সংসদীয় দল পাঠিয়ে সেখানকার নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাবে সাড়া দিয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ১২ আগস্ট (শুক্রবার) সর্বদল বৈঠক হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও উপস্থিত থাকবেন। এদিন দিনভর রাজ্যসভায় আলোচনার শেষে রাজনাথ অবশ্য বলেন, কাশ্মীরে প্রতিনিধিদল পাঠানোর আগে সেখানকার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে দেওয়া উচিত।

৮ জুলাই হিজবুল ওয়ানি সংঘর্ষে মারা যাওয়ার পর থেকে হিংসার আগুন জ্বলছে কাশ্মীরে। ৫৫ জনের বেশি নিহত হয়েছে সেখানে। জখম কয়েক হাজার।

কাশ্মীরের চলতি হিংসার পর্বের পিছনে পাকিস্তানকে দুষে রাজনাথ বলেন, কাশ্মীর উপত্যকায় যা-ই ঘটছে, তার পিছনে আছে পাকিস্তান। কাশ্মীরের মানুষ দায়ী নন।

তবে একইসঙ্গে তাঁর সাফ কথা, পৃথিবীর কেউ কাশ্মীর আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। পাকিস্তানের সঙ্গে যদি কোনও আলোচনা হয়ও, তা কাশ্মীর নিয়ে হবে না, হবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে।

তবে কাশ্মীর নিয়ে সরকার যে কাশ্মীরের মূল স্রোতের মধ্যপন্থী দলগুলির সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখছে, সে কথা জানিয়ে রাজনাথ বলেন, আমরা তৈরি। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, কোথা থেকে, কাদের সঙ্গে, কী ইস্যু নিয়ে কথা শুরু করা যায়। আমরা কথা বলব। সেজন্যই তো সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা উঠছে। তার ভিত্তি তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেলেই আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করব, প্রতিনিধিদল কাদের সঙ্গে আলোচনা করবে।

কাশ্মীরে পেলেট গান ব্যবহার করা নিয়ে যে অসন্তোষ, প্রতিবাদ উঠছে, সে ব্যাপারে তিনি জানান, নিরাপত্তাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযমী হয়ে থাকার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। তবে জাতীয় সংহতি, ঐক্যের প্রশ্নে কোনও আপস সহ্য করা হবে না। ভারতের মাটিতে পাকিস্তান-পন্থী স্লোগান কোনও পরিস্থিতিতেই মেনে নেওয়া হবে না।

এদিন আলোচনার সূচনা করে বিরোধী নেতা গুলাম নবি আজাদ সরকারকে আবেদন করেন, কাশ্মীরের মানুষের হৃদয় জয় করতে হবে। বলেন, আমরা সবসময় বলি, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু কথাটা শুধু কাগজে লেখা হলেই চলে না। হৃদয়, মনের যোগ থাকা চাই।

এমনকী তিনি কেন প্রধানমন্ত্রী মোদী সংসদে না বলে মধ্যপ্রদেশের জনসভায় কাশ্মীর নিয়ে মুখ খুলেছেন, সেই প্রশ্ন তুলে কটাক্ষ করেন, আফ্রিকায় কিছু হলে আপনি (মোদী) ট্যুইট করেন। পাকিস্তান শত্রু দেশ। সেখানে কিছু ঘটলেও আপনি কিছু বলেন। সবার প্রতি সহানুভূতি দেখানো ভাল। কিন্তু ভারতের মুকুট (কাশ্মীর) যখন জ্বলছে, আপনি সেটা হৃদয়ে উপলব্ধি না করুন, নিশ্চয়ই তার উত্তাপ বুঝতে পারেন। আজাদ এও বলেন, কাশ্মীর উপত্যকায় জল্পনা রয়েছে, সামনেই অমরনাথ যাত্রা শেষ হলেই গোটা রাজ্য সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। রাজনাথ বলেন, এসব গুজব উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে ছড়ানো হচ্ছে। এমন কোনও ভাবনাই নেই।