নয়াদিল্লি: বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলি অযোধ্যায় দ্রুত রামমন্দির তৈরির পথ প্রশস্ত করতে অর্ডিন্যান্স চেয়ে মোদি সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। কিন্তু অর্ডিন্যান্স জারির বিরোধিতা করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রায়ই চূড়ান্ত বলে সব পক্ষের মেনে নেওয়া উচিত, এমন অভিমত জানিয়েছেন বিজেপি-এনডিএ জোটের শরিক লোকজনশক্তি পার্টির সভাপতি। পাসোয়ান বলেছেন, রামমন্দির ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট যে রায়-ই দিক, তা হিন্দু, মুসলিম বা অন্য যে কোনও সম্প্রদায়ের কাছেই গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। আমাদের অবস্থান বরাবর এটাই। যখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা করবেন, তখন এ নিয়ে যাবতীয় দ্বিধা, সংশয়ের অবসান হওয়া উচিত।
তিনি রামমন্দির ইস্যুতে অর্ডিন্যান্স সমর্থন করবেন কিনা, প্রশ্ন করা হলে পাসোয়ান দাবি করেন, তাঁর অবস্থান ধারাবাহিক ভাবে একই, তিনি তা সমর্থন করবেন না।
আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত সরকার এই ইস্যুতে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না বলে প্রধানমন্ত্রী গত মঙ্গলবারই জানিয়েছেন।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, যিনি এনডিএ-র শরিকও, সম্প্রতি জানান, মন্দিরের মতো বিতর্কিত ইস্যুর সমাধান হওয়া উচিত হয় আদালতের রায়ে বা বিবদমান সব পক্ষের মধ্যস্থতার ভিত্তিতে। এবার পাসোয়ানও বলছেন সেকথা। রামমন্দিরের জমির মালিকানা মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিবেচনাধীন রয়েছে।
কেরলের শবরীমালা মন্দিরে মেয়েদের প্রবেশে অনুমতি দিয়ে সু্প্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ও সমর্থন করেন পাসোয়ান, তাঁর দল যে কোনও ধরনের লিঙ্গ বৈষম্যের বিরোধী বলে জানান। দলিত নেতা পাসোয়ানের বক্তব্য, বিজেপি শীর্ষ আদালতের রায়ের রূপায়ণে আপত্তি করে থাকতে পারে, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে নাক গলায়নি। সুপ্রিম কোর্ট তার রায় দিয়েছে। দুজন মহিলা মন্দিরে ঢুকেছেন। সরকার কি তাদের আটকেছে? লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনও বৈষম্য থাকা উচিত নয়। মেয়েরা মহাকাশে যাচ্ছে, কেন মন্দিরে ঢুকতে পারবে না।

এদিকে কেন্দ্রে, মহারাষ্ট্রে বিজেপির শরিক শিবসেনা আজ দলীয় মুখপত্র সামনা-য় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে বলেছে, কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার ক্ষমতায় থাকতে রামমন্দির তৈরি না হলে আর কবে হবে! ২০১৯ এর ভোটের আগে রামমন্দির না হলে তা হবে দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং সেজন্য বিজেপি, আরএসএসকে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই রামমন্দির নিয়ে সরকার পদক্ষেপ করতে পারে, সাম্প্রতিক সাক্ষাত্কারে মোদির মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে শিবসেনা বলেছে, মোদি রামের নামে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তবে ওনার মতে, রাম আইনের চেয়ে বড় নন। প্রশ্ন হল, সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের জমানায় মন্দির না হলে কবে হবে। মোদি সরকার গুজরাতে সর্দার বল্লভভাই পটেলের বিশাল মূর্তি বসিয়েছে, কিন্তু রামমন্দির ইস্যুতে ‘সর্দারের’ সাহস দেখাতে পারেননি, যা ইতিহাস মনে রাখবে। রামমন্দিরের দাবিতে আন্দোলন ১৯৯১-৯২ এ শুরু হয়, শয়ে শয়ে করসেবক মারা যান। কে, কেন ওই নিধন করেছিল? করসেবকরা একদিকে প্রাণ হারান, তারপর মুম্বই বিস্ফোরণে হিন্দু, মুসলিম দুতরফের কয়েকশো মানুষ নিহত হন। সুপ্রিম কোর্টই যদি সিদ্ধান্ত নেবে, তবে কেন এই গণহত্যা, রক্তপাত? বিজেপি, আরএসএস এর দায় নিতে প্রস্তুত কিনা, জানতে চেয়ে তারা বলে, যেমন শিখ নিধনের জন্য কংগ্রেসকে ক্ষমা চাইতে হয়েছে, তেমনই করসেবক নিধনে যারা বিজেপিকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি করছে, তাদের আবেগও বুঝতে হবে।
সাক্ষাতকারে নোট বাতিলের পদক্ষেপ সমর্থন করায় মোদিকে তোপ দেগে শিবসেনা বলেছে, নোট বাতিল যদি আঘাত না হয়ে থাকে,এবং তা হওয়ার এক বছর আগেই মানুষকে জানানোও হয়ে থাকে, তবে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে যারা মারা গেল, যারা কাজ হারাল, তারা কারা, তারা কি এদেশের নাগরিক নয়?