নয়াদিল্লি: ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি)-র অন্তর্ভুক্ত ফৌজদারি অবমাননা সংক্রান্ত দুটি ধারা ৪৯৯ ও ৫০০-কে বহালই রাখল সুপ্রিম কোর্ট। ধারা দুটিকে চ্যালেঞ্জ করে পেশ করা একগুচ্ছ পিটিশন খারিজ করে শীর্ষ আদালত পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, দুটিই বৈধ এবং কোনওভাবেই সংবিধানকে লঙ্ঘন করে না। এ প্রসঙ্গে বাক স্বাধীনতা, অধিকার নিরঙ্কুশ নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের বেঞ্চ।

 

৪৯৯ অনুচ্ছেদে ফৌজদারি অবমাননার সংজ্ঞার আলোচনা রয়েছে। ৫০০-তে আলোচনা করা হয়েছে তার সাজার দিকটি। এদিনের সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যের গভীর গুরুত্ব রয়েছে  রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে। তারা কত দূর কী বলতে পারেন, লিখতে পারেন, সে ব্যাপারে বিরাট তাত্পর্য রয়েছে এদিনের রায়ের।

 

দুটি ধারার বিরুদ্ধে আবেদন পেশ করেছিলেন বিজেপির সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ও কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী। তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক ভাষণ দিয়ে দুজনেই ৪৯৯ ও ৫০০ ধারায় ফৌজদারি অবমাননার অভিযোগে জড়িয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ধারা দুটি দিয়ে মত প্রকাশ ও বাক স্বাধীনতার অধিকার, বিশেষত রাজনৈতিক বক্তব্য প্রকাশের ওপর লাগাম পরানো হচ্ছে, তাকে খর্ব করা হচ্ছে। উনবিংশ শতকে তৈরি ঔপনিবেশিক আইনটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও বহাল রয়েছে। ধারা দুটির সাংবিধানিক বৈধতা সম্পর্কে কোনও বিতর্ক ছাড়াই সেগুলি টিকে রয়েছে। এর যৌক্তিকতা নেই। তাঁদের পাশাপাশি ধারা দুটির বিরুদ্ধে পিটিশন দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেছেন বিজেপি নেতা নিতিন গডকরী ও আরও অনেকে। কেজরীবালও ফৌজদারি অবমাননা আইনটি বাতিলের দাবি করেছেন।

তবে ফৌজদারি অবমাননা আইনকে ‘অন্যায়, ভুল’ বলে দেখা হোক, আবেদনকারীদের এই দাবির বিরোধিতা করে কেন্দ্রের তরফে ৪৯৯ ও ৫০০ ধারা বহাল রাখার সওয়াল করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অভিমত, সোস্যাল মিডিয়ায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধ কদর্য, কুরুচিকর বক্তব্য ছড়িয়ে তাঁর মানহানি করার প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। একে রুখতে ধারা দুটি প্রতিরোধী হিসাবে কাজ করবে।

 

তাছাড়া কেন্দ্রের তরফে ধারা দুটি বহাল রাখার সমর্থনে যুক্তি হিসাবে এও বলা হয় যে, অন্য দেশগুলিতে মানহানির মামলার খুবই দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে গেলেও ভারতে তার মীমাংসা হতে দীর্ঘদিন, এমনকী কয়েক দশক লেগে যায়।

 

কেন্দ্রের তরফে আরও জানানো হয়, সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে সুরক্ষিত বাক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের ওপর যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ জারি হয়েছে ১৯ (২) অনুচ্ছেদে। কিন্তু সেই অনুচ্ছেদে যথেষ্ট রক্ষাকবচও রাখা হয়েছে।

 

বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি প্রফুল্ল চন্দ্র পন্থের বেঞ্চ এক মাসের বেশি শুনানি চালিয়ে গত বছরের ১৩ অগাস্ট রায়দান স্থগিত রেখেছিল।