নয়াদিল্লি: পার্সনাল ল বা প্রতিটি ধর্ম, সম্প্রদায়ের নিজস্ব আইন-বিধিকে সংবিধান, মৌলিক অধিকারগুলির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হতে হবে, আগের সরকারগুলি এই স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছে, কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের পরিষ্কার মত হল, পার্সনাল ল অর্থাত্ নিজস্ব আইন-বিধিকে সংবিধানের সঙ্গে মানানসই হতে হবে, লিঙ্গ সমতা ও সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকারের সঙ্গে তাল রেখে চলতে হবে।


অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, তিন তালাক নিয়ে চলতি বিতর্কের মধ্যেই এক ফেসবুক পোস্টে এমনই তাত্পর্যপূর্ণ অভিমত জানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। 'তিন তালাক ও সরকারি হলফনামা' শিরোনামে ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, নিজস্ব, ব্যক্তিগত আইনকে সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চলতে হবে। তিন তালাক প্রথাকেও বিচার করতে হবে সমতা, মান মর্যাদার সঙ্গে জীবনধারণের অধিকারের মাপকাঠি অনুসারে।  এটা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, বাকি সব ব্যক্তিগত আইনের ক্ষেত্রেও একই মাপকাঠি প্রযোজ্য হতে হবে।

অভিন্ন দেওয়ানি বিধি থেকে তিন তালাক প্রথার সাংবিধানিক বৈধতা পৃথক বলে অভিমত জানিয়ে জেটলি বলেন, এখনও পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের সামনে প্রশ্নটা কিন্তু এটাই, তিন তালাক সাংবিধানিক দিক থেকে বৈধ কি না।

গত ৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হলফনামায় আইনমন্ত্রক সওয়াল করেছে, বহুবিবাহ ও তিন তালাক বাতিল করা উচিত কেননা এ ধরনের প্রথাকে ইসলাম ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে দেখা যায় না। জেটলি বলেন, আইন কমিশনের কাছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে অ্যাকাডেমিক বিতর্ক চলতেই পারে। কিন্তু যে প্রশ্নটার জবাব দেওয়া প্রয়োজন, সেটা হল, যেহেতু প্রতিটি সম্প্রদায়, গোষ্ঠীর নিজ নিজ বিধি-আইন রয়েছে, সেগুলি কি সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া কাম্য নয়? ধর্মীয় রীতি-প্রথা ও নাগরিক অধিকারের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে বলে জানিয়ে তিনি বলেছেন, জন্ম, উত্তরাধিকার সূত্রে কিছু পাওয়া, বিয়ে, মৃত্যু—সবই ধর্মীয় রীতি অনুসারে চলতে পারে। কিন্তু জন্ম, দত্তক, উত্তরাধিকার, বিয়ে, ডিভোর্স, এই সংক্রান্ত অধিকারগুলি কি ধর্ম দ্বারা চালিত হবে না সাংবিধানিক গ্যারান্টি অনুসারে নির্ধারিত হবে? এগুলির কোনও একটির ক্ষেত্রে কি মানবিক মান-মর্যাদার প্রশ্নে আপস করা যায় বা বৈষম্য চলতে পারে?