তিরুঅনন্তপুরম: ভি এস অচ্যুতানন্দন নন, কেরলে ক্ষমতায় ফেরা বাম গণতান্ত্রিক মোর্চার মু্খ্যমন্ত্রী হচ্ছেন পিনারাই বিজয়ন। সিপিএম নেতৃত্ব এমন সিদ্ধান্ত নিলেও শুক্রবার সকালে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি এ ব্যাপারে। তবে আচমকা একেজি ভবনে সিপিএম রাজ্য কমিটি দফতর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় ৯২ বছরের বৃদ্ধ অচ্যুতানন্দনকে। তা থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়, দল প্রচারে রাজ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা ভাঙিয়ে ভোটে জিতলেও তাঁর ভাগ্যে শিঁকে ছেড়েনি। তাঁকে টপকে তাঁর চেয়ে বয়সে ২০ বছরের ছোট বিজয়নকেই মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসাচ্ছেন প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরিরা। তবে প্রকাশ্যে অচ্যুতানন্দনকে ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তুলনা করেছেন তাঁরা।

 

গতকাল বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা ১২৬ সদস্যের কেরল বিধানসভায় ৯১ টি আসন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ-কে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আজ সিপিএম রাজ্য কমিটি ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বিজয়নের নামেই সর্বসম্মতিক্রমে সিলমোহর পড়ে। বিকালে সাংবাদিকদের ডেকে এ কথা জানান সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বৈঠকে ছিলেন তিনি নিজেও। পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাটও ছিলেন। সাংবাদিকদের ইয়েচুরি বলেন, পার্টি পিনারাই বিজয়নের নাম বাম গণতান্ত্রিক মোর্চার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কবে নতুন সরকার শপথ নেবে, তা মোর্চার বাকি শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির করা হবে বলে জানান তিনি। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, রাজ্য কমিটিতে পাল্লা ভারী বিজয়নের দিকেই। এই সিদ্ধান্ত তারই প্রতিফলন।

ইয়েচুরি বলেন, অচ্যুতানন্দনের বয়স, শারীরিক সক্ষমতা ও তাঁর ভূমিকার কথা মাথায় রেখে আমরা সর্বসম্মতির ভিত্তিতে পিনারাই বিজয়নকে বাম মোর্চা পরিষদীয় দলের নেতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

শোনা যাচ্ছে, বিজয়নকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর সিদ্ধান্ত অচ্যুতানন্দনকে ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয়। তা শুনেই মনঃক্ষুন্ন হয়ে তিনি বেরিয়ে যান রাজ্য দফতর থেকে। তবে এমনটা ঘটেনি, বোঝাতে তাঁকে ও সিপিএম রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনকে পাশে বসিয়েই সাংবাদিক বৈঠক করেন ইয়েচুরি। এমনকী তাঁকে বহু যু্দ্ধের ‘পোড়খাওয়া সৈনিক’ বলে প্রশংসা করে কিউবার কমিউনিস্ট নায়ক ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গেও তুলনা করেন তাঁর। বলেন, কমরেড ভি এস কেরলের ফিদেল কাস্ত্রো। আজকের কিউবায় ফিদেলের মতোই তিনি আমাদের পরামর্শ দেবেন, পথ দেখাবেন, প্রাণিত করবেন।

দুজনের দীর্ঘ দ্বন্দ্ব, সংঘাতের আবহে অচ্যুতানন্দনকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে পিছনে ফেলে দিলেন বিজয়ন। ২০০৬ থেকে ২০১১- অচ্যুতানন্দন মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে দুজনের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসায় চরম অস্বস্তিতে পড়ে সিপিএম। ঘটনাক্রম এমন দিকে গড়ায় যে, পলিটব্যুরো থেকে দুজনকেই বের করে দেওয়া হয়। তবে বিজয়নের পরে পুনর্বহাল হলেও অচ্যুতানন্দনকে স্রেফ কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমন্ত্রিত সদস্য করেই রাখা হয়।

এই প্রেক্ষাপটে এবার মুখ্যমন্ত্রী পদে কাউকে মুখ হিসাবে প্রজেক্ট না করেই বিধানসভা ভোটে প্রচারে নামে সিপিএম।