কোঝিকোড়: উরির ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে বর্বরোচিত সন্ত্রাসবাদী হামলার এক সপ্তাহের মাথায় প্রথম মুখ খুলেই পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দিয়ে প্রত্যাঘাত করলেন নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি তিনি কড়া বার্তা দেন পাকিস্তান ও জঙ্গিদের, কটাক্ষ করেন ক্রমাগত কাশ্মীর ইস্যু আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ফায়দা তোলার চেষ্টায় তত্পর পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকেও।

হুঁশিয়ারির সুরে তিনি পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে বলেন, উরির হামলার কথা কোনওদিন ভুলব না, সেখানে নিহত ১৮ জওয়ানের বলিদানও বিফলে যাবে না।

কোঝিকোড়ে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের ফাঁকে দলীয় জনসভায় মোদী বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাস রপ্তানি করছে। সন্ত্রাসবাদ আর পাকিস্তান সমার্থক। পাকিস্তানের এই সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকলাপ কূটনৈতিক ভাবে উন্মোচিত করে তাদের বিচ্ছিন্ন করতে সার্বিক আক্রমণের রাস্তায় হাঁটবে ভারত। সন্ত্রাসবাদীরা ভাল করে জেনে রেখো, ভারত কোনওদিনই উরির সন্ত্রাস ভুলবে না। পাকিস্তানের নেতৃত্বকেও বলছি, ১৮ শহিদের বলিদান ব্যর্থ হবে না।

পাকিস্তানকে কাঠগড়ায় তুলে তিনি বলেন, এশিয়ায় একটিই মাত্র দেশ আছে যাদের লক্ষ্যই সন্ত্রাস ছড়ানো। ২১ শতক যাতে এশিয়ার শতক না হয়, সেটা সুনিশ্চিত করতে চাইছে তারা। প্রতিটি রাষ্ট্র একটি দেশকেই সন্ত্রাসবাদের জন্য দায়ী করছে। এশিয়ায় একটিমাত্র দেশই সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আস্তানা। বিশ্বের সর্বত্র সন্ত্রাস রপ্তানিতে জড়িত একটিই দেশ।

মোদী এও বলেন, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা অন্য যেখানেই হোক, যখনই সন্ত্রাসবাদী হামলার খবর শুনি, দেখি সন্ত্রাসবাদীরা এই দেশটি (পাকিস্তান) থেকেই গিয়েছে বা হামলার পর ওসামা বিন লাদেনের মতো সেখানেই গা ঢাকা দিয়েছে।

ভারতীয় জওয়ানদের অবদানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমরা গর্বিত ওদের জন্য। প্রতিবেশী দেশটি থেকে ১৭ বার ফিঁদায়ে (আত্মঘাতী) হামলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সবগুলি ভেস্তে দিয়েছেন সেনা জওয়ানরা। ১১০ জন জঙ্গিকে তাঁরা খতম করেছেন, যা সাম্প্রতিক কয়েকটি বছরে সবচেয়ে বেশি।

পাশাপাশি নাম না করে তিনি কটাক্ষ করেন শরিফকেও। বলেন, পাশের দেশের নেতারা সন্ত্রাসবাদীদের লিখে দেওয়া বিবৃতিই পড়ছেন। কাশ্মীর গীত গাইছেন তাঁরা। কিন্তু আজ এই সভা থেকে পাকিস্তানের মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চাই আমি। তাঁদের মনে করিয়ে দিতে চাই, ১৯৪৭-এর আগে আপনারা পূর্বজরা কিন্তু এই ভূমিকেই কুর্ণিশ করতেন।

পাশাপাশি বালুচিস্তান, পাক অধিকৃত কাশ্মীর প্রসঙ্গও তোলেন তিনি। বলেন, আপনাদের নেতাদের প্রশ্ন করুন, কেন তাঁরা অধিকৃত কাশ্মীর, সাবেক বাংলাদেশ, পাখতুনিস্তান, গিলগিট, বালুচিস্তানকে সামলাতে পারছেন না, শুধু কাশ্মীরের কথা বলে আপনাদের বিভ্রান্ত করছেন।

তিনি এও বলেন, পাকিস্তানের জনগণ তাঁদের নেতাদের জিজ্ঞাসা করুন, কেন একসঙ্গে স্বাধীনতা পেলেও ভারত যেখানে সফটওয়ার রপ্তানি করে, সেখানে কেন পাকিস্তান সন্ত্রাস রপ্তানি করে!

মোদী ভাষণে উল্লেখ করেন, ওদের নেতারা  বলতেন, ভারতের সঙ্গে হাজার বছরের যুদ্ধ চলবে।  তাঁরা আজ কোথায়? একইসঙ্গে বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি। আমি বলতে চাই, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে নামতে চায় ভারত। সাহস থাকলে আসুন, বেকারি, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামুন। দেখাই যাক না, ভারত না পাকিস্তান, শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হয়?

সন্ত্রাসবাদকে মানবতার শত্রু তকমা দিয়ে তিনি বলেন, গোটা বিশ্বের মানবতাবাদীদের একজোট হয়ে সন্ত্রাসের নিন্দা করতে হবে।

এক ঝলকে মোদীর ভাষণ------

#উরির ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী দেশকে কাঠগড়ায় তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,

#সন্ত্রাসবাদ মানেই পাকিস্তান ।

#পাকিস্তান সন্ত্রাস  রপ্তানি করে।

#বিশ্বের যেখানেই সন্ত্রাস, সেখানেই নাম ওঠে পাকিস্তানের।

#ওসামা বিন লাদেনকেও আশ্রয় দিয়েছিল পাকিস্তান।

#এশিয়াতে ওরাই একমাত্র দেশ যারা সন্ত্রাসে মদত দেয়।

#বিশ্বজুড়ে রক্ত ঝরাচ্ছে একটাই দেশ।

#উরিতে জওয়ানদের মৃত্যু কখনই ভুলব না।

#ভারত তার জওয়ানদের নিয়ে গর্বিত।

#সম্প্রতি ১১০ জন জঙ্গিকে মেরেছে সেনা।

#সন্ত্রাসবাদীদের লেখা ভাষণ পাঠ করছেন, নাম না করে নওয়াজ শরিফকে কটাক্ষ।

#সন্ত্রাসের সামনে কখনই মাথা নত করেনি, করবেও না ভারত।

#এশিয়ার যেখানেই কোনও দেশ সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে, তারা দুষছে একটিই দেশকে।

#এশিয়ার সব দেশ ২১ শতককে এশিয়াক ২১ শতক বানিয়ে তুলতে বদ্ধপরিকর, ব্যতিক্রম একটিই দেশ।

#আগে নিজের এলাকা সামলান, আগে বালুচিস্তান, গিলগিট সামলান, তারপর কাশ্মীর নিয়ে কথা বলবেন, শরিফকে বার্তা।

# গরিবি, বেকারি দূর করার লড়াইয়ে নামুন ভারতের সঙ্গে। দেখা যাক, কে আগে গরিবি, বেকারি ঘোচাতে পারে, ভারত না পাকিস্তান। চ্যালেঞ্জ করছি।