নয়াদিল্লি:নোট বাতিলের উদ্দেশ্য সৎ। কিন্তু যেভাবে নোট বাতিল করা হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগ করলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহ। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় মনমোহন বললেন, যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকার আচমকা ৫০০ ও ১,০০০ টাকার নোট বাতিল করে দিয়েছে, তাতে চরম হয়রানির মুখে পড়েছেন মানুষ। এভাবে চললে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার ওপর তাঁদের ভরসা উঠে যাবে।


প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, বলা হয়েছে, নোট বাতিল হলে সন্ত্রাসবাদ ধাক্কা খাবে। তা না হয় হল। কিন্তু যেভাবে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে, তাতে পাহাড়প্রমাণ গলদ রয়েছে। মানুষ নিজেদের টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলতে পারছেন না। তাঁর প্রশ্ন, পৃথিবীতে এমন কী কোনও দেশ আছে, যেখানে সাধারণ মানুষের নিজের টাকা তোলার অধিকার নেই। নোট বাতিলের চিন্তা ভুল ছিল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে তো এটাই যথেষ্ট। তাঁর মতে, এর ফলে লুঠকে শৃৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়েছে, ভুলকে দেওয়া হয়েছে আইনি স্বীকৃতি। গ্রামে মূলত কাজ করে সমবায় ব্যাঙ্ক। কিন্তু নোট বাতিলের পর সেগুলি বন্ধ রয়েছে। ফলে মারাত্মক অসুবিধেয় পড়েছেন মানুষ। মনমোহনের আশা,  প্রধানমন্ত্রী এমন কোনও বাস্তবোচিত পথ বার করবেন, যাতে সাধারণের কষ্ট লাঘব হবে।

তবে বিরোধীদের দাবি মেনে নিয়ে অবশেষে বৃহস্পতিবার সংসদে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যদিও নোট বাতিল নিয়ে অশান্তির জেরে লোকসভা ইতিমধ্যেই শুক্রবার পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে গেছে।

এর আগে আজ সকাল ১০টায় সর্বদল বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ঠিক ছিল, সেখানে সংসদ চলতে দিতে সব পক্ষকে অনুরোধ করা হবে। কিন্তু সরকার জানায়, আলোচনার জন্য বিরোধীদের আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ করেনি তারা। শোনা যায়, বোঝাপড়ার রাস্তা খুঁজতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ঘরে বিরোধীদের বৈঠকে ডেকেছেন।  কিন্তু তাতে যোগ দেয়নি বিরোধীরা। বরং উল্টে ওই সময় কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করতে বিরোধীদের বৈঠক ডাকেন। তাতে ঠিক হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কক্ষে বৈঠকে যোগ দেওয়া হবে না, উল্টে ২৮ তারিখ পর্যন্ত কোনও কথা হবে না সরকারের সঙ্গে।

বিরোধীরা বারবার দাবি করলেও গত সপ্তাহে রাজ্যসভায় একবারও আসেননি মোদী। সরকার সেই দাবি খণ্ডন করে জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিই বিরোধীদের যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দেবেন। কিন্তু এই কদিনে সংসদ কার্যত অচল থেকে যাওয়ায় রণকৌশল পাল্টে সরকার ঠিক করেছে, বিরোধীদের বুঝিয়ে সংসদ সচল রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৮ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। এই অধিবেশনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাতে চায় কেন্দ্র। জিএসটি সংক্রান্ত দুটি বিলও আছে এগুলির মধ্যে, এই অধিবেশনে যে দুটি পাশ না হলে আগামী এপ্রিলের মধ্যে জিএসটি চালু কঠিন হয়ে যাবে।