নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ সূচক প্রস্তাব নিয়ে সংসদের উভয়কক্ষে বিতর্কের জবাবি ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিরোধীদের প্রবল হৈহট্টগোলের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে নাম না করে কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। বিরোধীদের হট্টগোলে যোগ দেয় এনডিএ শরিক টিডিপি-ও।নিজের ভাষণের শুরুতেই এ দিন রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রংশসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বিরোধী দলগুলি রাষ্ট্রপতির ভাষণের নানা অংশের সমালোচনায় যে ভাবে সরব হয়েছে, তার বিরোধিতা করলেন প্রধানমন্ত্রী।  বললেন, মাননীয় রাষ্ট্রপতির ভাষণ কোনও রাজনৈতিক দলের ভাষণ নয়। রাষ্ট্রপতির ভাষণ হল প্রত্যেক ভারতীয়ের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, দেশভাগের জন্য দায়ী কংগ্রেস। সেই দেশভাগের ফল এখনও ভোগ করতে দেশের মানুষ।
কংগ্রেসকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশকে টুকরো করার রাজনীতি বন্ধ করুন। সংসদ অচল করার ক্ষমতা কারুর নেই। আপনারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন বিরোধী দলের অস্তিত্ত্ব ছিল না। সংবাদমাধ্যম আপনাদেরই নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু আপনারা শুধু একটি পরিবারেরই জয়গান করতেন।
মোদীর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন কংগ্রেস সদস্যরা। লোকসভায় বিরোধী বেঞ্চ থেকে ভেসে আসে আওয়াজ, ১৫ লক্ষ টাকার কী হল?


মোদী বলেন, বারবার ৩৫৬ ধারা জারি করেছে কংগ্রেস। অনেক রাজ্য সরকারকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাই কংগ্রেসের মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না।

তিনি বলেন, কংগ্রেস ও নেহরু দেশে গণতন্ত্র আনেননি। মোদী তাঁর ভাষণে দাবি করেন ,প্রাচীন কাল থেকেই ভারতে গণতন্ত্র ছিল। তাঁর আরও দাবি, দ্বাদশ শতকেও ভারতে গণতন্ত্র ছিল, মহিলাদের সমানাধিকার ছিল।



প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, বিজেপি সরকার যে কাজের ঘোষণা করে তা সম্পূর্ণ করে।  তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন তাঁর বক্তৃতায়।

তিনি বলেছেন,উন্নয়ণের পথে এগিয়ে চলেছে দেশ।

কর্মসংস্থানের ব্যাপারে সরকারের সাফল্য দাবি করেছেন মোদী। তিনি বলেছেন, দেশে তিন কোটি উদ্যোগপতি তৈরি হয়েছে। তাঁর ঋণ দিয়েছে বিজেপি সরকার। নানা অনুদান দিয়ে কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করেছে সরকার।
আধার আটকাতে কংগ্রেস অপপ্রচার করেছে। তাঁর সরকার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আধারের ব্যবহার করেছে। আধারের ফলে দুর্নীতি কমেছে।
নানা অনুদান দিয়ে কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করেছে সরকার।ভর্তুকির টাকা সরাসরি প্রাপকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে। এরফলে মধ্যসত্ত্বভোগীদের পকেটে টান পড়েছে।

মোদী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক, ওড়িশা, কেরল সরকার জানিয়েছে, এই রাজ্যগুলিতে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই তথ্য জানিয়ে তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘এগুলো কি কর্মসংস্থান নয় ?এই রাজ্যগুলিতে বিজেপি সরকার নেই।
মোদী আরও বলেছেন, কংগ্রেস কখনও অন্য দলের সরকারকে কৃতিত্ব দেয় না। কিন্তু বিজেপি সরকার দেয়। তিনি লালকেল্লার ভাষণে একাধিকবার বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাজের কথা উল্লেখ করেছেন।
মোদী বলেছেন, ছোট ছোট শহরে ১৬টি নতুন বিমানবন্দর চালু হয়েছে।আজ দেশে প্রায় ৪৫০ উড়োজাহাজ চালু হয়েছে।৯০০-র বেশি নতুন উড়োজাহাজের অর্ডার দেওয়া হয়েছে।রেল-রাস্তার কাজ প্রতিদিন মনিটরিং করা হয়।মনিটরিংয়ের ফলে কাজে স্বচ্ছতা এসেছে, গতি বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছেন, এখনও দেশের ২০ শতাংশ মানুষের বাড়িতে আলো নেই।৪ কোটি গরিবের ঘরে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি।১৫০০০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে।সেই সাশ্রয়ের টাকা গেছে মধ্যবিত্তের পকেটে।
তিনি আরও বলেছেন, এর আগে কৃষক উত্পাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পেত না। এখন সেই ব্যবস্থা করেছে সরকার। কৃষকের ফসল যাতে নষ্ট না হয়, সেইদিকেও নজর দিয়েছে কেন্দ্র।কৃষকের পশুপালনের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সেদিকে নজর রয়েছে।
কংগ্রেসের সমালোচনা করে মোদী বলেন, আপনারা বড় কিছু ভাবতেই পারেন না, শুধু ছোট মনের পরিচয়।আমরা সর্বত্র গুড গভর্নেন্স চালু করেছি।ট্রেনের টিকিট থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে ভর্তি সর্বত্র স্বচ্ছতা এনেছি।
তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বহু গরীব মানুষের ঘর তৈরি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগে গরীব মানুষ চিকিত্সা করাতে পারতেন না । ৫ লক্ষ টাকার চিকিত্সা বিমার প্রস্তাব হয়েছে তাতে তাঁরা চিকিত্সা করে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
তিনি বলেছেন, এতদিন দেশকে যারা লুঠ করেছে, তাদের সেই লুঠের টাকা ফেরত দিতে হবে । এই জায়গা থেকে আমরা কখনও সরব না ।

ব্যাঙ্কগুলির অনুত্পাদক সম্পদ (এনপিএ) বৃদ্ধির দায় পূর্বতন কংগ্রেস সরকারের বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। ঋণের আবেদন জানালেই সেই আবেদন মঞ্জুর হত ।তার ফলেই অবস্থা আজ এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে ।
‘এনপিএ-র পরিমাণ ১৮ লক্ষ কোটি থেকে ৫২ লক্ষ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে ।দেশ এজন্য কংগ্রেসকে ক্ষমা করবে না।