নয়াদিল্লি:  সোমবার রাতে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে দিল্লি। আর মঙ্গলবার, লোকসভায় নরেন্দ্র মোদীর গলাতেও সেই ভূমিকম্প।
বিভিন্ন নথি তুলে ধরে মোদীর বিরুদ্ধে, সহারা ও বিড়লার থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন রাহুল গাঁধী। সেই সব নথির ভিত্তিতে তদন্তের দাবি অবশ্য খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই প্রেক্ষাপটে, মঙ্গলবার লোকসভায় কংগ্রেস সহ-সভাপতিকে পাল্টা জবাব দিলেন মোদী। বললেন, গতকাল একটা ভূমিকম্প হয়েছিল। যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত তাঁদের সহায়তায় আমরা যথাসম্ভব করব। তবে, একটা ভূমিকম্পের হুমকি আমি অনেকদিন আগে শুনেছিলাম। যাক, শেষ পর্যন্ত, ভূমিকম্প এল তো!
গত বছরের ডিসেম্বরে কংগ্রেস সহ-সভাপতি জানিয়েছিলেন, তাঁকে সংসদে মুখ খুলতে দেয়নি সরকার। কারণ ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তর কেলেঙ্কারি এই নোট বাতিল। এবং সংসদে যদি তিনি মুখ খোলেন, তাহলে ভূমিকম্প হয়ে যাবে। এদিন নরেন্দ্র মোদী কারও নাম না করলেও, তাঁর এই ভূমিকম্প-জবাবের নিশানায় যে রাহুল গাঁধীই ছিলেন, তা স্পষ্ট।
এখানেই থেমে থাকেন নি তিনি। ভূমিকম্পের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মোদী যোগ করেন, ভূমিকম্পের কোনও কারণ নিশ্চয় আছে। হয়ত ধরিত্রী মা রেগে গিয়েছেন। আরে, যদি কেউ কেলেঙ্কারির মধ্যেও সেবা, নম্রতা খুঁজে পাবে, তাহলে তো তিনি রাগবেনই।
যদিও, মোদীর পাল্টা জবাব দিতে বেশি সময় ব্যয় করেননি রাহুল গাঁধী। এদিন সংসদে মোদীর ভূমিকম্প-কটাক্ষের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, এসব বলে প্রধানমন্ত্রী আখেরে উত্তরাখণ্ডের মানুষকেই অপমান করেছেন। উত্তরাখণ্ডের মানুষ যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল, এদিন তাকে ব্যঙ্গ করেছেন মোদী, বলেও দাবি করেন রাহুল। শুধু রাহুল নন, মোদীকে এ দিন পাল্টা নিশানা করে কংগ্রেসও। তাদের দাবি, পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল যে দিন বের হবে, সেদিনই আসল ভূমিকম্প হবে।
কংগ্রেসকে নিশানা করে নরেন্দ্র মোদী এ দিন বার বার সুর চড়িয়েছেন। বলেছেন, আমি অতীতেও জানিয়েছি, প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর উচিত দেশের জন্য অবদান রাখা। কিন্তু একটা দল রয়েছে, যারা একটি পরিবারকে সবকিছু উৎসর্গ করেন। পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে কংগ্রেসও। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় নাগরিক এক-লাইনের কথা বলতে বেশি পছন্দ করেন। কারণ, তিনি ভীত ও বিভ্রান্ত।
শুধু বিরোধীদের আক্রমণ করাই নয়, এদিন নোট বাতিল নিয়ে ওঠা যাবতীয় সমালোচনার জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ডিমোনেটাইজেশনের স্বপক্ষে জোর সওয়াল করে মোদী দাবি করেন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। তাড়াহুড়ো করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের সমালোচনায়, লোকসভার গত শীতকালীন অধিবেশনে ঝড় তুলেছিল বিরোধীরা। গত রবিবার, উত্তরপ্রদেশের কানপুরে প্রচারে গিয়ে রাহুল গাঁধী বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদী নতুন কৌশল বার করেছেন। যা মনে হয় বলে দেন, সে সত্যি হোক কিংবা মিথ্যে। বাজে লোকের চোখে সবটাই স্ক্যাম। মঙ্গলবার, বাজেট অধিবেশনে তার জবাব দিলেন নরেন্দ্র মোদী। সরাসরি নিশানা করলেন কংগ্রেসকে। বললেন, স্বচ্ছ ভারত, নোট বাতিল হল একটি আন্দোলন দেশকে দুর্নীতি ও কালো টাকা থেকে মুক্ত করার। তিনি যোগ করেন, সকলেই জানে দুর্নীতি নগদ থেকেই শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে বেনামি সম্পত্তি, সোনা, অলঙ্কার.. সব এক এক করে জড়িয়ে পড়ে।
কংগ্রেসের দাবি, ঠিক কী উদ্দেশ্যে নোট বাতিল, তা নিয়ে বার বার গোলপোস্ট বদলেছেন নরেন্দ্র মোদী। কখনও বলেছেন, এটা কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই, কখনও বলেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। কখনও আবার ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এ দিন এরও জবাব দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এ নিয়েও এ দিন কটাক্ষ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। বলেন, ২০০৭ সালে আপনারাই দাবি করেছিলেন গ্রামে কম্পিউটার ও মোবাইল বিপ্লব আনার। এখন যখন আমি বলছি, মোবাইলের মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং করুন, তখন আপনারা প্রশ্ন তুলছেন।
কংগ্রেসের দাবি, যে ভাবে নোট বাতিলের জেরে দেশের সাধারণ ও গরিব মানুষ চরম নাকাল হয়েছে, তাতেই স্পষ্ট, যথেষ্ট প্রস্তুতি না নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেয় মোদি সরকার। এ দিন মোদীর পাল্টা দাবি, ভাল অর্থনীতির প্রয়োজন ছিল তাই এটিই নোট বাতিলের সঠিক সময়। মোদী দাবি করেন, কেউ যেন ভেবে না নেন, যে তিনি হঠকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
১১ ফেব্রুয়ারি থেকে উত্তরপ্রদেশে সাত দফার ভোট শুরু। ঠিক তার আগে, এ দিন যে ভাবে লোকসভায় দাঁড়িয়ে কংগ্রেসকে নিশানা করলেন নরেন্দ্র মোদী, তা যথেষ্ট তাৎ‍পর্যপূর্ণ বলেই মত পর্যবেক্ষকদের একাংশের।