মুম্বই: পিএবি জালিয়াতি নিয়ে যখন তোলপাড় দেশ, তখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিল, সুইফ্ট পরিকাঠামোর অপব্যবহার নিয়ে ২০১৬ সালের অগাস্ট মাস থেকে তিনবার দেশের সবকটি ব্যাঙ্ককে সতর্ক করা হয়েছিল।


১১,৪০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির প্রেক্ষিতে এবার নড়েচড়ে বসেছে আরবিআই। এই মর্মে আরবিআই-এর সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের প্রাক্তন সদস্য ওয়াই এইচ মালেগামের নেতৃত্বে একটি পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।


কমিটির লক্ষ্য হবে, সম্পদের বিন্যাসের ক্ষেত্রে যে এত ফারাক হয়, তার কারণ খতিয়ে দেখা এবং একইসঙ্গে তা রুখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নির্ধারণ করা। পাশাপাশি, ব্যাঙ্ক প্রতারণার ঘটনার সংখ্যার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা এবং তা রুখতে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করা।


পঞ্চাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে এই বিপুল পরিমাণের সুইফ্ট-সংক্রান্ত প্রতারণা হওয়ায় উদ্বিগ্ন শীর্ষ ব্যাঙ্ক। দেশের সবকটি ব্যাঙ্ককে পাঠানো নির্দেশিকায় আরবিআই এই পদ্ধতির ওপর আরও কঠোর নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে।


পিএনবি-কে ১১,৪০০ কোটি টাকার প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদী এবং মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, জাল লেটার অউ আন্ডারটেকিং(এলওইউ) নিয়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন এই দুজন।


পিএনবি এই তথ্য প্রকাশের আগেই, দেশ ছেড়ে চম্পট দিয়েছেন প্রতারণাকাণ্ডের কিংপিন নীরব ও তাঁর মামা মেহুল। ইতিমধ্যেই এই প্রতারণার তদন্তে নেমেছে ইডি, সিবিআই, এসএফআইও ও আয়কর দফতর। আরবিআই জানিয়েছে, দেশের ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে নজরদারি কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে সময়ে সময়ে ব্যাঙ্কগুলিকে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা পাঠানো হয়। যার মধ্যে ব্যাঙ্কের ঝুঁকিপূর্ণ কাজকর্মে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ।


শীর্ষ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, সুইফ্ট পরিকাঠামোর যে ঝুঁকি আছে, তা নিয়ে গত ২০১৬ সালের অগাস্ট মাস থেকে তিনবার দেশের সবকটি ব্যাঙ্ককে সতর্ক করা হয়েছে। সবাইকে বলা হয়েছে, সুইফ্টের অপব্যবহার যাতে না হয়, তা নজর রাখতে।


কী এই সুইফ্ট?


সাধারণত, যখন কোনও ব্যক্তি বিদেশ থেকে কিছু আমদানি করতে যান, তখন তিনি বায়ার্স ক্রেডিট নেন। বায়ার্স ক্রেডিটের দুটো সুবিধা রয়েছে। এর সুদ কম এবং সঙ্গে সঙ্গে টাকা দিতে না হওয়ায় নগদে সুবিধা পাওয়া যায়। বায়ার্স ক্রেডিট নিতে গেলে, লেটার অফ আন্ডারটেকিং দিতে হয়।


যে ব্যবসায়ী এই বায়ার্স ক্রেডিট নেন, তিনি বিদেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলেন, জানার চেষ্টা করেন, কোথায় সুদের পরিমাণ সবচেয়ে কম। সেই অনুযায়ী, নিজের দেশীয় ব্যাঙ্ক থেকে সেই ব্যাঙ্কের জন্য এলওইউ নেন।


লেটার অফ আন্ডারটেকিং-এর জন্য একটি আন্তর্জাতিক মেসেজিং সিস্টেম রয়েছে। এর নাম সুইফ্ট। যার অর্থ, সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইন্টার ব্যাঙ্ক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন।


সব ব্যাঙ্কেই তিন জন করে অফিসার এই এলওইউ-এর দায়িত্বে থাকেন। তাঁদের কাছেই ‘সুইফ্ট’-এর পাসওয়ার্ড থাকে। একজন অফিসার মেসেজ (আবেদন) তৈরি করেন। দ্বিতীয় জন ভেরিভাই করেন। তৃতীয় জন আবেদনে চূড়ান্ত সিলমোহর দেন।


এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া মাত্রই, দেশীয় ব্যাঙ্কের দেওয়া এলওইউ সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিদেশি ব্যাঙ্কে পৌঁছে যায়। তারপর সেখান থেকে বায়ার্স ক্রেডিট পান ব্যবসায়ী।