লখনউ: মথুরায় উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে পুলিশের সঙ্গে জবরদখলকারীদের সংঘর্ষে পুলিশ সুপার সহ ২৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে শুরু হয়ে গেল রাজনীতি।

 

উত্তরপ্রদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার অভিযোগে বিরোধী দলগুলি একযোগে অখিলেশ যাদব সরকারকে তীব্র আক্রমণ করল। বিজেপি, কংগ্রেস, বহুজন সমাজ পার্টির নিশানায় সমাজবাদী পার্টি। তবে এরই মধ্যে কংগ্রেস আবার বিজেপি-কেও আক্রমণ করেছে। কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি-র মাথায় রাখা উচিত, এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করার বদলে শান্তি ফেরানো এবং দোষীদের সাজা দেওয়া জরুরি।

 

কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী ট্যুইট করে বলেছেন, এই হিংসার ঘটনা থেকেই প্রমাণিত, উত্তরপ্রদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, রাজ্য সরকার দ্রুত মথুরায় শান্তি ফিরিয়ে আনবে এবং দোষীদের শাস্তি দেবে।

 

কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সূরজেওয়ালা বলেছেন, সপা সরকারের উচিত ঘটনা গুরুত্ব বুঝে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। রাজনীতি করার বদলে এখন শান্তি ফেরানো, সরকারি জমি জবরদখলকারীদের সাজা দেওয়া এবং খুনিদের গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।

 

বিজেপি এই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে। কেন্দ্রের শাসক দলের জাতীয় সচিব শ্রীকান্ত শর্মা বলেছেন, এই হিংসাত্মক ঘটনার প্রধান ষড়যন্ত্রকারীকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিচ্ছে সপা। পুলিশের হাত বেঁধে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। সেই কারণেই দু জন পুলিশ আধিকারিকের মৃত্যু হয়েছে।

 

রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র বিজয় বাহাদুর পাঠক বলেছেন, গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার কারণেই মথুরার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীরা কতজন ছিলেন, তাঁদের হাতে কী ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ছিল সে বিষয়ে ঠিক সময়ে খবর নেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী নৈতিক দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।

 

বসপা সুপ্রিমো মায়াবতী আবার এই ‘দুর্ভাগ্যজনক এবং বেদনাদায়ক’ ঘটনার দায় স্বীকার করে সপা সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর মতে, দু বছর ধরে জবরদখলকারীদের ওখানে থাকতে দেওয়াই সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল। সপা সরকারের অপরাধী মানসিকতার জন্যই এই হিংসার ঘটনা ঘটেছে। এটা রাজ্য সরকারের লজ্জা। এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত।

 

মায়াবতীর আরও দাবি, রাজ্য সরকারের নীতিহীনতার কারণেই পুলিশও অসহায় হয়ে পড়েছে। সেই কারণেই দু জন পুলিশ আধিকারিকের মৃত্যু হয়েছে। সরকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিলেই কি নিহত দুই পুলিশ আধিকারিকের পরিবারের অভাব পূরণ হবে?  সরকার যদি এটা ভেবে থাকে তাহলে সেটা ভুল।

 

সমাজবাদী পার্টি অবশ্য দাবি করেছে, সরকারকে দোষ দেওয়া খুব সহজ। সরকার নিজের কাজ করছে। এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।  রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী শিবপাল বহিরাগতরাই হিংসার জন্য দায়ী। রাজ্য সরকার দু দিনের জন্য অবস্থানের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু বিহার ও মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা বিক্ষোভকারীরা জমি খালি করতে রাজি হয়নি। সরকার তাদের তুলে দেওয়ার জন্য পার্কের বিদ্যুৎ ও জল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কিন্তু তাতেও তারা সরে যাওয়ার বদলে হিংসায় জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ-প্রশাসনের কেউ যদি দোষী প্রমাণিত হন তাহলে তাঁকে সাজা দেওয়া হবে।

 

উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল রাম নায়েক এই মুহূর্তে মুম্বইয়ে রয়েছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে মথুরার ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছেন। অপরাধীদের চিহ্নিত করে সাজা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন রাজ্যপাল।