নয়াদিল্লি: বিজয় মাল্য ব্যাঙ্কগুলিকে ঠকিয়ে ৯,০০০ কোটি টাকা হস্তগত করে দেশ ছেড়েছেন বলে হইচই কম হয়নি। কিন্তু এবার যে পাহাড়প্রমাণ ব্যাঙ্ক জালিয়াতি সামনে এসেছে, তার সামনে মাল্যকে নেহাত কাঁচা খেলোয়াড় বলে হবে। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে, তাদের দক্ষিণ মুম্বই শাখায় ১১,০০০ কোটি টাকার ওপর জালিয়াতি হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাঙ্কের অন্তত ১০ কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।


জানা গিয়েছে, জালিয়াতি চলছিল ২০১১ থেকে। ব্যাঙ্ক থেকে ভুয়ো লেনদেন করেন কোটিপতি হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদী। পিএনবির কাছ থেকে ২৯ জানুয়ারি অভিযোগ পেয়ে সিবিআই প্রাথমিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ২৮০ কোটি টাকার জালিয়াতি মামলার তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ করা হয় তাঁর স্ত্রী, ভাই ও মামা মেহুল চোকসির বিরুদ্ধেও। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, জালিয়াতির পরিমাণ আকাশছোঁয়া, বেআইনিভাবে নীরব মোদীর সংস্থা যে টাকা লেনদেন করেছে তা ১১,০০০ কোটি টাকার বেশি। এ ব্যাপারে এ মাসের ১৩ তারিখ সিবিআইকে ফের অভিযোগ করেছে ব্যাঙ্কটি।

পিএনবি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরকারি ব্যাঙ্ক। নীরব মোদী ব্যাঙ্ক থেকে ২০০০ কোটি টাকা ও তাঁর মামা মেহুল চোকসি ৯০০০ কোটি টাকা ধার নেন। দুজনেই বিদেশ থেকে না কাটা হিরে আমদানি করেন। জালিয়াতির ব্যাপারে পিএনবি এফআইআর দায়ের করার আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন নীরব ও মেহুল। শোনা যাচ্ছে, তাঁরা রয়েছেন সুইজারল্যান্ডের দাভোসে। ব্যাঙ্ক চায়, তাঁদের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারি করা হোক।



জানা গিয়েছে, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট বা ফেমায় মামলা দায়ের করেছে। এই মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্র সিবিআইয়ের কাছ থেকে চেয়েছে তারা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও বেআইনি অর্থ লেনদেনের বিষয়টির তদন্তে নেমেছে। ঠিক কত অর্থ জালিয়াতি হয়েছে ও কীভাবে হয়েছে তার তদন্ত করছে তারা।

অভিযোগ, পিএনবির দুই আধিকারিকের যোগসাজসে নীরব মোদী ও তাঁর সহকর্মীরা গত বছর বিদেশ থেকে হিরে আমদারি নামে ব্যাঙ্ককে না জানিয়েই ৮টি অর্থ ঋণ সংক্রান্ত লেটার্স অফ আন্ডারটেকিং বা এলওইউ ইস্যু করেন। তাতে মনে করা হয়েছিল, ব্যাঙ্কের ২৮০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, লোকসান

গতকাল হু হু করে পড়েছে পিএনবির শেয়ারের দাম। ৯.৮১ শতাংশ পড়ে বাজার বন্ধের সময় শেয়ার পিছু দাম ছিল ১৪৫.৮০ টাকা।

৪৮ বছরের নীরব মোদী গ্ল্যামার দুনিয়ায় বিখ্যাত নাম। তাঁর ডিজাইনের হিরের গয়না কোটি কোটি টাকায় বিকোয় আন্তর্জাতিক দুনিয়ায়। বলিউডের নামি নায়িকা থেকে ধনকুবেরের স্ত্রী- নীরব মোদীর ডিজাইন ধনী মহলে অত্যন্ত সমাদৃত। তাঁর দুটি সংস্থা রয়েছে, একটি হিরের কারবার করা ফায়ারস্টার ডায়মন্ড, অন্য ব্র্যান্ডটি হল নীরব মোদী। নীরব চেয়েছিলেন, তাঁর নামের ব্র্যান্ড নীরব মোদী বিশ্বের সবথেকে বড় লাক্সারি গয়নার ব্র্যান্ড হয়ে উঠুক। কিন্তু ব্যাঙ্ক জালিয়াতি মামলায় সেই ঝকমকে ব্র্যান্ডে দুর্নীতির কালো দাগ লেগে গেল।