রাজনের দাবি, নোটবাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে কমিটি, সেই বোর্ডের সদস্য তিনি ছিলেন না। এমনকি কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে তাঁর মতও ছিল না। কারণ, আচমকা বাজার থেকে হাজার ও পাঁচশো টাকার নোট তুলে নিলে অর্থনীতিতে যে স্বল্পমেয়াদী ধাক্কা আসবে, তা বাস্তবে অর্থনীতির সুদূরপ্রসারী লাভের অঙ্ককে ফিকে করে দেবে।
আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নর এখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি র পাঠ পড়ান। তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইতে তিনি আরবিআইয়ের গভর্নর থাকাকালীন বিভিন্ন জায়গায় যে না না বিষয় বক্তৃতা দিয়েছেন, তারই একটি সংকলন পাওয়া যাবে । তবে এই বইতে তাঁর সঙ্গে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন বিষয় যে মতভেদ রয়েছে, সেব্যাপারে কিছু কথা উল্লেখ নেই বলেও জানা গিয়েছে।
একটি বিষয় আলোকপাত করেছেন রাজন, সেটা হল নোটবাতিল। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পর জানা গিয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরেই এই হাজার ও পাঁচশোর নোট বাতিলের জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছিল সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক। এব্যাপারে রঘুরামের দাবি, তাঁর সময় এপ্রসঙ্গে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি আরবিআই। তারপর তিনি জানান, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নোট বাতিল প্রসঙ্গে তাঁর মতামত জানতে চায় কেন্দ্র। মৌখিক ভাবে তিনি জানান, এই পদক্ষেপের সুদূরপ্রসারী ফল লাভজনক হলেও, স্বল্পমেয়াদী প্রভাব মোটেই লাভজনক হবে না। এমনকি যে লক্ষ্য নিয়ে নোট বাতিল করা হয়েছিল, সেই লক্ষ্যপূরণের অন্য বিকল্প পথের সন্ধানও দিয়েছিলেন রাজন।
সাম্প্রতিক এক সরকারি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ৮ নভেম্বর বাজার থেকে যে পাঁচশো ও হাজারের নোট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তাতে সিস্টেম থেকে ৮৬ শতাংশ নগদই উঠে গিয়েছিল। এরফলে দেশের জিডিপি ধাক্কা খেয়েছিল। গতবছর অক্টোবর-ডিসেম্বরে যেখানে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৭ শতাংশে, সেখানে নোট বাতিলের পর জানুয়ারি-মার্চে সেটা ধাক্কা খেয়ে ৬.১ শতাংশে নেমে আসে। এপ্রিল-জুনে সেটা নেমে আসে ৫.৭ শতাংশে। প্রসঙ্গত, বাজার থেকে নগদ তুলে নেওয়ার ফলে ক্রেতাদের কেনার ক্ষমতা কমে যায়। ব্যবসায় লগ্নি করতে ভয় পায় ব্যবসায়ীরা।
তবে সহমত না হলেও কেন্দ্র তাঁকে এই প্রসঙ্গে একটি নোট তৈরি করতে বলে। সেই নোটে ঠিক কী লেখাছিল, সেপ্রসঙ্গে বিস্তারিত কিছু বলেননি রাজন। পরে নোটটি খতিয়ে দেখার জন্যে বিশেষ একটি কমিটি গঠন করে কেন্দ্র। নোটে স্পষ্ট করে রাজন একটি বিষয় লিখে দিয়েছিলেন কালো টাকা উদ্ধারে নোট বাতিল করতে হলে, কতটা প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। সঠিক সময় ধরে প্রস্তুতি না নিয়ে সিদ্ধান্তটি অর্থনীতিতে লাগু হয়ে গেলে তার ফলও কী হতে পারে, সেকথাও উল্লেখ ছিল নোটে, দাবি প্রাক্তন গভর্নরের।
কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সফল না বিফল এই নিয়ে বহু পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক আরবিআইয়ের এক তথ্য বলছে হাজার ও পাঁচশোর নোটের ১৫.৪৬ লক্ষ কোটি টাকা, মানে প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্যাশই ফেরত এসেছে সিস্টেমে। এর থেকে একটি বিষয় পরিস্কার কালো টাকার মালিকরা কোনও না কোনওভাবে তাদের অবৈধ নোট বৈধ করতে পেরেছে।