নয়াদিল্লি: ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বোঝাপড়ার কারণ দেখিয়ে গতকাল প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রাফালে ডিলের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। পাল্টা রাহুল গাঁধীর দাবি, ওই ডিলে কেলেঙ্কারি হয়েছে। রাফালে যুদ্ধবিমানের দাম না জানানোয় মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই প্রথম একজন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলছেন, আমরা ওই যুদ্ধবিমান কেনার খরচের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করব না। গুজরাত ভোটের প্রচারে আমি বলেছিলাম, রাফালে চুক্তিতে কেলেঙ্কারি হয়েছে। মোদীজী নিজে ওই চুক্তি করিয়েছেন। মঙ্গলবার সংসদের বাইরে কংগ্রেস সভাপতি বলেন, মোদীজী স্বয়ং প্যারিস গিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত ভাবে ডিল বদলেছেন। গোটা ভারত এটা জানে। এখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলছেন, তিনি ওই বিমান ক্রয়ে কত খরচ হচ্ছে, সেটা ভারত, ভারতীয় শহিদ ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের বলবেন না। এর মানে কী ? মানে এটাই, কেলেঙ্কারি একটা আছেই।
গতকাল রাজ্যসভায় সমাজবাদী পার্টি (এসপি) সদস্য নরেশ আগরওয়াল লিখিত প্রশ্ন করে জানতে চান, সরকার কি রাফালে কিনতে ভারত, ফ্রান্সের মধ্যে হওয়া চুক্তির তথ্য জনসমক্ষে আনতে ইচ্ছুক নয়? তখনই ওই জবাব দিয়েছিলেন নির্মলা।
কংগ্রেসও আজ দাবি করে, এনডিএ সরকার রাফালে চুক্তিতে জাতীয় স্বার্থ, নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করেছে। কেলেঙ্কারি হয়েছে ডিলে, স্বচ্ছতা নেই এতে। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, মোদী সরকার জাতীয় স্বার্থ, নিরাপত্তার প্রশ্নে আপস করেছে, যা ক্ষমা করা যায় না। বায়ুসেনার জন্য যুদ্ধবিমান সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় বিরাট কেলেঙ্কারির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সরকার জনসমক্ষে সত্য প্রকাশ করতে চাইছে না। ফলে সরকারি তহবিলে বিশাল অঙ্কের লোকসানের আশঙ্কা, দাবি জোরদার হচ্ছে।
সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস নেতারা দাবি করেন, রাফালে ডিল নিয়ে কংগ্রেসের তোলা আটটি প্রশ্নের জবাব দিন প্রধানমন্ত্রী। সরকার এ ব্যাপারে 'সম্পূর্ণ', 'হিসাবমাফিক নীরবতা' পালন করছে। কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, বিমানের ক্রয়মূল্য প্রকাশের স্বচ্ছতা রাখা হয়নি, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহ পদ্ধতির প্রধান ধারাগুলি সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করা হয়েছে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটির সম্মতি নেওয়ার রীতি মানা হয়নি। প্রযুক্তি হস্তান্তরে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া, প্রধানমন্ত্রীর কাছের পুঁজিপতি বন্ধুদের আর্থিক স্বার্থরক্ষাকে নগ্ন ভাবে তুলে ধরার ফলে ফ্রান্সের দাসল্ট এভিয়েশন থেকে ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান ক্রয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
গুলাম নবি আজাদের দাবি, প্রচলিত পদ্ধতি ভেঙে ফ্রান্স সফরে মোদী কী দামে ৩৬টি রাফালে কিনেছেন, তা সরকারকে জানাতে হবে। এমন তথ্য এসেছে যে, ইউপিএ জমানায় ৫২৬.১ কোটি টাকা দাম ঠিক হলেও এনডিএ আমলে তা ধার্য হয়েছে ১৫৭০.৮ কোটি টাকা। ওই বিমান কাতারকে একই কোম্পানি ৬৯৪.৮ কোটি টাকায় বেচলেও ভারতকে দিচ্ছে  একশ গুণ বেশি দামে। কেন প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রয়মূল্য চেপে যাচ্ছেন?
আরেক কংগ্রেস নেতা রণবীর সিংহ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, বাধ্যতামূলক প্রতিরক্ষা সংগ্রহ প্রক্রিয়া অগ্রাহ্য করে কী করে প্রধানমন্ত্রী ৩৬টি রাফালে বিমান কেনার একতরফা সিদ্ধান্ত নিলেন, সে সময় ফ্রান্সের সঙ্গে কোনও আন্তঃসরকার বোঝাপড়া না হওয়া সত্ত্বেও।