আলমোড়া (উত্তরাখণ্ড): ফের রাহুল গাঁধীর আক্রমণের নিশানায় নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেস সহ-সভাপতির মতে, দেশকে দুভাগে ভাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একদিকে, এক শতাংশ বিত্তশালী, অন্যদিকে, ৯৯ শতাংশ গরিব।


এদিন উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ায় একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর তীব্র সমালোচনায় মুখর হন রাহুল। তাঁর দাবি, ৮ নভেম্বরে মোদী নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর একশোর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।


তিনি বলেন, সংসদে কংগ্রেস সহ বিরোধীরা স্পিকারকে বলে, কারও মৃত্যু হলে সংসদে নীরবতা পালন করি। ১০০ জনের জন্যও লোকসভায় ২ মিনিট নীরবতা পালন করা উচিত। জবাব মেলে, এটা হতে পারে না। মোদীজি ১০০ জনকে শ্রদ্ধা জানাতে দেননি।


এদিন ফের মোদীর ‘ব্যক্তিগত দুর্নীতি’-র প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন রাহুল। বলেন, মোদীকে টাকা দিয়েছে সহারা। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন রাহুল। আমাকে নিয়ে যত খুশি ব্যঙ্গ করুন, কিন্তু উত্তর দিন।


বলেন, আমি আপনাকে প্রশ্ন করলাম। আপনি আমাকে বিদ্রুপ করলেন। আপনি এটা বুঝে নিন, প্রশ্ন আমি করছি না। দেশবাসী করছে। আপনি দেশকে বলুন, এটা সত্যি না মিথ্যে।


রাহুলের দাবি, মোদী সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে কোনও পদক্ষেপ নিক, কংগ্রেস একশোভাগ সমর্থন দেবে। কংগ্রেস দেশ থেকে দুর্নীতি মুছে দিতে চায়। কিন্তু, নোটবন্দি কালো টাকা বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নয়। তা হল আর্থিক ডাকাতি। রাহুলের ব্যঙ্গ, মোদীর নীতিই হল ‘রাম রাম জপনা। গরিব কা মাল আপনা।’


কেন্দ্রের ওপর আক্রমণ চালু রেখে রাহুল বলেন, আড়াই বছরে নরেন্দ্র মোদী একটাই কাজ করেছেন। দেশের গরিবের ওপর আক্রমণ। নোট বাতিল করে গরিবকে জবরদস্ত চোট দিয়েছে কেন্দ্র। তাঁর কটাক্ষ, মোদী দেশকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। একদিকে ৯৯ শতাংশ গরিব। একদিকে ৫০টি পরিবার।


রাহুল যোগ করেন, আড়াই বছরে এনডিএ-র নীতি ১ শতাংশ লোককে ৬০ শতাংশ সম্পত্তি পাইয়ে দিয়েছে। ৫০টি পরিবারকে সবথেকে সম্পত্তি দিয়েছেন। এরা তাঁরা, যাঁরা আপনার সঙ্গে বিমানে চড়ে বিদেশে যান।


কালো টাকার বিরুদ্ধে মোদীর অভিযানকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস সহ-সভাপতি বলেন, কালো টাকা দেশের ৯৯ শতাংশ সৎ মানুষের কাছে নেই। কালো টাকা দেশের কৃষকের কাছে নেই। মজুরের কাছে নেই। কালো টাকা আছে ৫০টি সুপার রিচ পরিবরের কাছে। কালো টাকা আছে সোনা, সম্পত্তিতে।


নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের জন্য মোদীকে আবার আক্রমণ করে রাহুল বলেন, কেউ জানে না মোদী কেন ৬ শতাংশ নগদে নিশানা করছেন, ৯৪ শতাংশ কালো সম্পত্তিতে নয়, মোদী কৃষককে নিশানা করছেন, সুপার রিচকে নয়।


রাহুলের দাবি, ৬ শতাংশ কালো টাকা নগদে। ৯৪ শতাংশ সুইস ব্যাঙ্কে। তিনি বলেন, ভোটের সময় মোদী বলেছিলেন, বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লক্ষ কোটি টাকা পড়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী হলে সেই টাকা ফেরত আনব। ১৫ লক্ষ টাকা অ্যাকাউন্টে দেব।


মোদীর প্রতিশ্রুতিকে মনে করিয়ে দিয়ে রাহুলের প্রশ্ন, এখানে কতজন ১৫ লক্ষ টাকা পেয়েছেন?  কতজন কালো টাকার কারবারিকে মোদী জেলে পুরেছেন?


সুইস সরকার অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের নাম ভারত সরকারকে দিয়েছে। বিজেপির মন্ত্রীই সংসদে এটা বলেছেন। এই চোরদের নাম লোকসভা, রাজ্যসভায় কেন প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না? প্রশ্নও তোলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি।


বিজয় মাল্য, ললিত মোদীর নাম নিয়েও এদিন কেন্দ্রকে কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, সরকার এঁদের ফেরত আনছে না। নোটবন্দির পর মালিয়াকে ১২০০ কোটির ‘টফি’ দিয়েছেন। মানুষের থেকে টাকা কেড়ে মাল্যকে দিচ্ছেন।


রাহুল বলেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নয়, মোদী গরিবের ওপর, মধ্যবিত্তের ওপর ফায়ার বম্বিং করেছেন। গরিবের টাকা শুষে নিয়ে ধনীর ঋণ মাফ করো। মোদী বলেছিলেন ৫০ দিনে সব ঠিক হবে। রাজীব-তনয়ের দাবি, ৬-৭ মাসের আগে কিছু ঠিক হবে না। ততদিনে ৮ লক্ষ কোটি টাকা মাফ হবে।


নোট বাতিলের কথা বিজেপির সকলেই আগে থেকে জানত বলেও দাবি করেছেন রাহুল। তিনি বলেন, মোদী বলছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা কাউকে বলেননি। অথচ, সিদ্ধান্তের ঠিক আগে বাংলার বিজেপি ইউনিট কী করে কোটি কোটি টাকা কেন ব্যাঙ্কে জমা দিল?  বিহারে বিজেপি কেন এর আগে জমি কিনল? জনার্দন রেড্ডি ৫০০ কোটি দিয়ে কীকরে মেয়ের বিয়ে দিলেন? তাঁর দাবি, বিজেপির তাসের ঘর ভেঙে পড়ছে।