নয়াদিল্লি: পাঁচশো ও হাজারের নোট বদলাতে সাধারণ মানুষ যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে, তখন অনেকে এই নোট চালান করতে বার করেছেন অন্য ফন্দি। রেল ও বিমানের টিকিট।
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার নোট বাতিলের কথা ঘোষণার পর থেকে হঠাৎই ওয়েট লিস্টের টিকিট বিক্রি হু হু করে বেড়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার যেখানে সারা দেশে ১০৯ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়, সেখানে বুধবার টিকিট বিক্রি থেকে আয় একলাফে বেড়ে হয়েছে ১২৪ কোটি।
রেল কর্তাদের অনুমান, এটা আসলে পুরনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট চালান করার কৌশল। কারণ, শুক্রবার পর্যন্ত রেলের কাউন্টারে পুরোনো নোট নেওয়া হবে। তাই গ্রাহকরা সেখানেই এই নোট গছিয়ে দিতে চাইছে।
পরে ওয়েট লিস্ট টিকিট বাতিল করে দিলে সামান্য একটা অংশ কেটে বাকি টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। আর সেই নোট হয় একশো টাকার হবে, নাহলে নতুন নোট। অর্থাৎ পুরনো নোট বদলানোও হল। ব্যাঙ্কের ঝক্কিও পোহাতে হল না। আবার কালো টাকা সাদাও হয়ে গেল!
রেলকর্তাদের দাবি, সম্ভবত একারণেই লম্বা যাত্রার রেলপথে টিকিট বিক্রি বাড়ছে চোখে পড়ার মতো। কারণ এক্ষেত্রে টিকিটের দামও বেশি। ফলে বেশি সংখ্যায় পাঁচশো বা হাজারের নোট চালিয়ে দেওয়া সম্ভব।
এটা চোখে পড়ার পরই নড়েচড়ে বসেছে রেল। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওয়েট লিস্টের যে টিকিট বুক হবে, তা বাতিল হলে নগদে টাকা ফেরত দেওয়া হবে না। টাকা দেওয়া হবে অ্যাকাউন্টে।
পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, শেষ মুহূর্তে বড় অঙ্কের টিকিট বাতিল দেখলে টিডিআর অর্থাৎ টিকিট ডিপোজিট রিসিপ্টের তদন্ত হবে। খতিয়ে দেখা হবে, টিকিট বাতিলের সঙ্গত কারণ আছে কিনা।
অন্যদিকে, মধ্য রেল জানিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত মধ্য রেলে ৫০ হাজার টাকার বেশি টিকিট কাটলে প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক। রেলকর্তাদের দাবি, এই পদক্ষেপ না নিয়ে উপায় ছিল না। কারণ পরিস্থিতি প্রায় নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিল।
যেসব রুটে ভরা মরসুমেও টিকিট পাওয়া যায়, সেখানেও হঠাৎ করে সব টিকিট বুক হয়ে যাচ্ছিল। বেঙ্গালুরুর একটি কাউন্টারে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৩ লক্ষ ওয়েট লিস্ট টিকিট বিক্রি হয়, সেখানে বুধবার টিকিট বিক্রি হয়েছে ১২ লক্ষ। দিল্লির বিভিন্ন জায়গাতেও বুধবার ওয়েট লিস্টের টিকিট বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
শুধু রেল নয়, গত ২ দিনে হু হু করে বেড়েছে বিমানের আগাম টিকিটের চাহিদাও। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেন্দ্রের কাছে খবর আসতে শুরু করেছে যে, অনেকেই পুরনো নোট দিয়ে বিমামযাত্রার আগাম টিকিট কেটে কালো টাকাকে সাদায় রূপান্তর করার চেষ্টা করছে।
যেমন স্পাইসজেটের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাঁদের সংস্থায় সাধারণত দিনে গড়ে ২০-২৫ লক্ষ টাকার টিকিট বুকিং হয়। তাঁর দাবি, গত ৪৮-ঘণ্টায় সেই পরিমাণ বেড়ে ১ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে।
এই ঘটনার পরই নড়চড়ে বসে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক। অবিলম্বে এক নির্দেশিকা জারি করে সরকারের তরফে দেশের সকল বিমান পরিবহণ সংস্থাকে জানানো হয়েছে যে, গত ২ দিনে বুকিং হওয়া কোনও বিমান টিকিট পরে ক্যানসেল করার চেষ্টা হলে, তা যেন না করা হয়। কেন্দ্রীয় সূত্রের মতে, নির্দেশিকা এসেছে একেবারে ওপরমহল থেকে।