নয়াদিল্লি: রাজস্থানের ভরতপুরের এক সরকারি হাসপাতাল থেকে সদ্যোজাত পুত্রসন্তান চুরির অভিযোগে মথুরা থেকে দুই বোন শিবানী দেবী ও প্রিয়ঙ্কা দেবীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ওদের ১২ বছরের ভাই দু বছর আগে মারা যায়। পুত্র সন্তানের আশায় বাবা ফের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ছেলে হারানোর শোক, তার ওপর স্বামীর আবার বিয়ের প্ল্যান, সব মিলিয়ে ওদের মা অবসাদে ভুগছিলেন। মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চুরি করা বাচ্চাটিকে তাঁর হাতে উপহার হিসাবে তুলে দেবে ভেবেছিল দুই বোন। পুলিশি জেরায় তারা এ কথাই জানিয়েছে।
গত ১০ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটিকে সরিয়ে ফেলে তারা। কিন্তু পুলিশ বাচ্চা চোরকে খুঁজছে, খবরের কাগজে এ কথা পড়ে ভয়ে বাচ্চাটিকে তিনদিন বাদে রারাহ গ্রামের কাছে দুধের বোতল সহ রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে যায় তারা। সঙ্গে একটি চিরকুট ছেড়ে যায়। তাতে লেখে, বাচ্চাটিকে দেখামাত্র পুলিশকে খবর দিন, বলুন, এই সেই ১০ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ সদ্যোজাত।
ভরতপুরের পুলিশ সুপার অনিল কুমার তঙ্ক জানান, তদন্তকারীরা হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুজনকে চিহ্নিত করেন। ফুটেজে ওদের স্কুটারে চাপতে দেখা গিয়েছে। তবে হাসপাতালের স্কুটার, সাইকেল পার্কিং লটে একটি লোকের সেই যানের রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি মনে ছিল। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৩ (অপহরণ) ধারায় দুজনকে মথুরার স্বরূপা নওগাঁও থেকে গ্রেফতার করা হয়। বাচ্চা চুরিতে অভিযুক্ত হয় তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, দুই বোন ভরতপুরে রেকি করে গিয়েছিল। নিকটবর্তী পাহারি টাউনের কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে ১০ জানুয়ারি ভোরে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন জনৈক মনীশের স্ত্রী। মা, বাচ্চাকে ভাল পরিচর্যার জন্য ওই সরকারি মহিলাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুরে মা ঘুমোচ্ছিল, এই সুযোগে বাচ্চাটিকে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যায় তারা। তবে হাসপাতালের ভিডিওর নজরদারি এড়াতে পারেনি।
পুলিশ সুপার জানান, দুই বোন পুলিশকে জানিয়েছে, প্রথমে তারা বাবা লক্ষ্মণ সিংহকে পুত্রসন্তানের বাসনা মেটাতে আবার বিয়ে করা থেকে নিরস্ত করতে একটি ছেলে দত্তক নেওয়ার চেষ্টা করে। নার্সদের কাছে খবর নেয়, কোনও গরিব পরিবার আছে কি পয়সার বিনিময়ে যারা ছেলে বিক্রি করতে চায়। তবে আইনি রাস্তায় দত্তক নেওয়ার অনেক হ্যাপা, তাছাড়া অভাবে দায়ে পড়ে সন্তান কেনাবেচায় শাস্তিও পেতে হয়, এটা জানার পরই সেই চেষ্টা ছেড়ে বাচ্চা চুরির ছক কষে।

শিবানী একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ায়, বিবাহিত, স্বামী-সংসার আছে। প্রিয়ঙ্কাও বিবাহিত, স্নাতক হওয়ার পড়াশোনা করছে।