নয়াদিল্লি: কাশ্মীরে অশান্তির জেরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২। নিরাপত্তারক্ষী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির ওপর হামলা অব্যাহত। রবিবার রাতে একদল কট্টরপন্থী দক্ষিণ কাশ্মীরের অবন্তীপুরা এয়ারবেসে হামলা চালায়। বাইরে থেকে ইটপাটকেল ছুঁড়লেও বায়ুসেনা ঘাঁটির কোনও ক্ষতি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক সারলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আফ্রিকা সফরে গিয়েছিলেন ডোভাল কিন্তু কাশ্মীরে অশান্তির জেরে সফর অসমাপ্ত রেখে ফিরে আসেন তিনি। দিল্লিতে পা রেখেই ডোভাল সোজা যান রাজনাথের অফিসে, সেখানে তাঁদের মধ্যে আধঘণ্টা কথাবার্তা হয়। স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মহর্ষি ও ইনটেলিজেন্স ব্যুরো প্রধানও বৈঠকে ছিলেন। পরে ডোভাল জানান, তাঁর বিশ্বাস, কাশ্মীরে অশান্তি শিগগিরই মিটে যাবে। কেন্দ্রের ধারণা, ১৩ তারিখ, শহিদ দিবসের আগে অনেকটা ঠান্ডা হয়ে আসবে কাশ্মীর। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন, ১৯৩১-এ যে দেশপ্রেমিকরা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের স্মরণে পালিত হয় দিনটি।

সরকারি সূত্রে খবর, বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে সরকারপক্ষ সর্বোচ্চ সংযম বজায় রাখলেও যারা সাধারণ মানুষ ও নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর হামলা চালাতে চাইছে, তাদের ক্ষমা করা হবে না। আফ্রিকা সফর সেরে মঙ্গলবার সকালে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে সকালেই বৈঠক ডেকেছেন তিনি। উপত্যকায় অশান্তির জেরে আসন্ন আমেরিকা সফর বাতিল করেছেন রাজনাথ সিংহও। বাদল অধিবেশন শুরু হলে তিনি লোকসভায় বিবৃতি দেবেন এ ব্যাপারে। তবে এর মধ্যেই ফের শুরু হয়েছে অমরনাথ যাত্রা, পবিত্র গুহার দিকে রওনা দিয়েছেন জম্মুর ক্যাম্পে আটকে পড়া তীর্থযাত্রীরা।

জানা যাচ্ছে, দু’মাস আগে ডোভালের নেতৃত্বে শীর্ষ নিরাপত্তা আধিকারিকদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, হিজবুল মুজাহিদিনের শীর্ষ জঙ্গিদের পুরোপুরি খতম করে দেওয়া হবে। সেই সিদ্ধান্তমতই এনকাউন্টারে বুরহান ওয়ানির মৃত্যু। তবে বুরহানের মৃত্যুর জেরে কাশ্মীরে শুরু হওয়া অশান্তি কমার কোনও লক্ষণ এখনও নেই। উপত্যকার কিছু এলাকায় পণ্ডিতদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁদের নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি ইতিমধ্যেই কথা বলেছেন, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লার সঙ্গে।

কংগ্রেস অবশ্য কাশ্মীর ইস্যুতে দু'মুখো নীতি নিয়েছে। সনিয়ার নামে দিল্লি থেকে যে বিবৃতি জারি হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করার প্রশ্ন নেই, জঙ্গিদের কড়া হাতে দমন করতে হবে। আবার শ্রীনগর থেকেও সনিয়ার নামে জারি হয়েছে বিবৃতি। তাতে মৃতদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। হাসপাতালে গিয়ে আহতদের দেখে প্রয়োজনে রক্ত দেওয়ার জন্যও দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে দু’ক্ষেত্রেই উপত্যকায় অশান্তির জন্য মোদী সরকারের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে।