মুম্বই: আইজা তনভির কুরেশি। চার বছরের ছোট্ট আইজার কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল। হিমো-ডায়ালিসিসের মাধ্যমে তাঁকে বাচিয়ে রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন চিকিৎসকেরা। দিদিমার জন্য সেই আইজা নতুন জীবন ফিরে পেল। আদরের নাতনিকে কিডনি দান করেছেন দিদিমা।


বয়স মাত্র চার। কিন্ত এইটুকু বয়সেই কঠিন জীবন সংগ্রামের সম্মুখীন হতে হয়েছিল আইজাকে। চিকিৎসকের কাছে যখন আইজাকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন অনেকটা দেরী হয়ে গিয়েছে।


তার কিডনি এতটাই অকেজো হয়ে গিয়েছিল যে রেচনপ্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছিল। হিমোডায়ালিসিল ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। ছোট্ট আইজাকে বাঁচিয়ে রাখতে চিকিৎসকেরা হিমোডায়ালিসস শুরু করেন।


কিন্তু ওইটুকু শিশুর হিমোডায়ালিসস বেশ কষ্ট সাপেক্ষ। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন ছোট্ট আইজাকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন কিডনি। এগিয়ে আসেন আইজার মামার বাড়ির তরফের দিদিমা।


২৫ নভেম্বর মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই অম্বানি হাসপাতালে জোড়া অস্ত্রোপচার হয়। ৭৪ বছর বয়সি দিদিমার কিডনিতে নতুন করে জীবনের আলো দেখতে শুরু করেছে আইজা।


হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসক শরদ শেঠ বলেছেন, ’’ আইজা ওর মা-বাবার একমাত্র সন্তান। আমাদের কাছে যখন আসে তখন ওর অবস্থা গুরুতর। গত ছ'মাস ধরে ওর মুখ ফুলে যাচ্ছিল। তার সঙ্গে খিদে কমে যাওয়া, গা গুলানো, বমি এসব উপসর্গ ছিল। ফলে কিডনি প্রতিস্থাপন ছা়ড়া আর কোনও উপায় ছিল না।‘‘


চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তাঁর দিদিমার বয়স ৭৪ বছর হলেও, কিডনি প্রতিস্থানপনের জন্য রক্তের গ্রুপ এবং প্রয়োজনীয় মাপকাঠিগুলি পরিবারের সদস্যের মধ্যে একমাত্র তাঁর সঙ্গে মিলেছিল।


অস্ত্রোপচারের পর গত তিন সপ্তাহ ধরে দাতা এবং গ্রহীতা দুজনেই ভাল আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিডনি প্রতিস্থাপনের পাঁচ দিন পর দাতা(দিদিমা)-কে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দু সপ্তাহ পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল ছোট্ট তনভিরকে।


আইজা নতুন করে জীবন ফিরে পাওয়ায় অত্যন্ত খুশি তাঁর বাবা-মা। তাঁর মা বলেছেন ’’একদিন অন্তর অন্তর আইজাকে হিমোডায়ালিসিস করতে দেখতে পারছিলাম না আমরা। কোকিলাবেন হাসপাতালের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ যে আর পাঁচজন শিশুর মতো আইজাকে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছেন ওঁরা। আইজার দিদিমা ওকে প্রাণে বাঁচালেন। আমরা সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।‘‘


হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপন নিয়ে ভারতে নানান ধরনের ভুল ধারণা রয়েছে মানুষের মধ্যে। কিন্তু অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বয়সের ব্যবধান যে কোনও বিষয় নয়, তাও এ ক্ষেত্রে সামনে এল। যা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবে বলেই আশা চিকিৎসকদের।