নয়াদিল্লি: ১৬টি বিরোধী দল শুক্রবার থেকে শুরু হতে চলা সংসদের বাজেট অধিবেশনের সূচনায় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের ভাষণ বয়কট করবে বলে জানালেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ। বিরোধী দলগুলির দাবি, প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীতে কৃষকদের পূর্বঘোষিত ট্রাক্টর মিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া নজিরবিহীন হিংসার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। ওই হিংসায় কেন্দ্রীয় সরকারের কী ভূমিকা ছিল, তাও তদন্ত করে খতিয়ে দেখার দাবি করেছেন বিরোধীরা।
২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি সংসদে ভাষণ দেবেন। ১ ফেব্রুয়ারি সাধারণ বাজেট পেশ করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আজাদ বলেন, আমরা ১৬টি বিরোধী দল মিলে বিবৃতি দিয়ে বলছি, কাল সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ আমরা বয়কট করছি। এই সিদ্ধান্তের পিছনে প্রধান কারণ, বিরোধীদের ছাড়াই জোর করে কৃষি আইনগুলি সংসদে পাশ করানো হয়েছে।
২৬ জানুয়ারি সকাল থেকে রাজধানীর বুকে আন্দোলনকারীদের বেনজির তাণ্ডবের জেরে অশান্তি, হিংসার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে ১৬টি দলের নেতারা বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতের কৃষকরা তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে লড়ছেন। বিজেপি সরকার একতরফা সেগুলি চাপিয়ে দিয়েছে। আইনগুলি ভারতীয় কৃষির ভবিষ্য়ত্কে বিপন্ন করে তুলছে। আর ভারতীয় জনজীবনের ৬০ শতাংশের বেশি টিকে আছে কৃষির ওপরই। কোটি কোটি কৃষক, ভাগচাষী, কৃষিমজুরের জীবন নির্ভর করে তার ওপর।
১৬ দলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাড় কাঁপানো, কনকনে শীত, বৃষ্টি অগ্রাহ্য করে নিজেদের অধিকার রক্ষায়, ন্যয়বিচার চেয়ে রাজধানীর দিল্লি ঢোকার একাধিক পয়েন্টে গত ৬৪ দিন ধরে অবস্থান-বিক্ষোভ চলছে লাখ লাখ কৃষকের। ১৫৫ জন কৃষক মারা গিয়েছেন। কিন্তু সরকার অবিচলিত, কৃষক বিক্ষোভের জবাব দিয়েছে জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ও লাঠি প্রয়োগ করে। সরকারি মদতে ব্যাপক ভুল তথ্য ছড়িয়ে, অপপ্রচার, মিথ্যা প্রচারের অভিযানের মাধ্যমে একটা বৈধ, ন্যয্য গণ আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার প্রতিটি প্রয়াস চালানো হয়েছে। প্রতিবাদ, আন্দোলন মোটের ওপর শান্তিপূর্ণই রয়েছে। যদিও দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, রাজধানীতে কিছু হিংসার ঘটনা ঘটেছে প্রজাতন্ত্র দিবসে, দ্বিধাহীন ভাষায় যার নিন্দা হয়েছে সর্বস্তরে। আমরাও কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলায় নেমে দিল্লি পুলিশকর্মীদের আঘাত লাগার ঘটনায় উদ্বেগ, বেদনা জানিয়েছি। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, পুরো ঘটনাবলীর পিছনে যে কেন্দ্রের হাত রয়েছে, সেটা নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে। পাশাপাশি বিরোধীদের বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, তিনটি কৃষি আইনই রাজ্যগুলির অধিকার ও সংবিধানের মূল মর্মবস্তুর ওপর বড়সড় আঘাত। বলা হয়েছে, বাতিল না হলে এই আইনগুলি জাতীয় খাদ্য সুরক্ষাকে বিপন্ন করে তুলবে, যা দাঁড়িয়ে আছে ন্য়ূনতম সহায়ক মূল্যে সরকারের ফসল সংগ্রহ ও গণবন্টন ব্যবস্থার ওপর। রাজ্যগুলি, কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই কৃষি বিল গুলি আনা হয়েছে, এর পিছনে জাতীয় ঐকমত্য় নেই। সংসদীয় পরীক্ষানিরীক্ষা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বিরোধীদের মতামত উপেক্ষা করে, সংসদীয় রীতিনীতির ধারেকাছে না হেঁটে সেগুলি পাশ করানো হয়েছে। ফলে এই আইনগুলির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সরকার উদ্ধত, একগুঁয়ে, অগণতান্ত্রিক মানসিকতা দেখাচ্ছে। সরকারের সংবেদনশীলতার অভাবে বিস্মিত আমরা। ফের এই যৌথ দাবি তুলছি যে, কৃষক বিরোধী আইনগুলি বাতিল করতে হবে। কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে বলছি, সংসদের উভয় কক্ষে রাষ্ট্রপতির ভাষণ বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।