নয়াদিল্লি: গুরুগাঁওয়ের রায়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে প্রদ্যুম্ন ঠাকুর হত্যাকাণ্ডের রহস্যের উন্মোচন করা হয়েছে বলে দাবি করছে সিবিআই। নিজের বাবা ও নিরপেক্ষ এক সাক্ষীর সামনেই  অভিযুক্ত একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া অপরাধ কবুল করেছে বলে এক জুভেনাইল কোর্টকে জানিয়েছে সিবিআই।
গতকাল গুরুগ্রামের ওই আদালতে অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে রাখার আর্জি জানায় সিবিআই। আদলতকে সিবিআই বলে, এই অপরাধে আর অন্য কেউ জড়িত কিনা, তা জানতে ওই পড়ুয়াকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।
যে দোকান থেকে ছেলেটি প্রদ্যুম্নকে গলা কেটে খুনের জন্য ছুরি কিনেছিল, সেই দোকানটি চিহ্নিত করতে চায় সিবিআই। ঘটনার পুণর্নির্মাণের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে বলে আদালতকে জানায় সিবিআই।  কারণ, ঘটনার পুণর্নির্মাণ করলে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রের হত্যার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অন্য কোনও কিছু তথ্যপ্রমাণ হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গতকাল আদালত ধৃত ছাত্রকে তিনদিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেয়।
জানা গেছে,  যে দোকান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি কেনা হয়েছিল, সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় একদশ শ্রেণির ছাত্রকে। এদিন তাকে কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এ ব্যাপারে সিবিআই বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকার করেছে।
২৫ মিনিটের সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরেই প্রদ্যুম্ন  হত্যাকাণ্ডের রহস্যের উন্মোচন করা হয়েছে বলে দাবি করছে সিবিআই।ওয়াশরুমের সামনে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজে ৭ জনকে দেখা যায়। সেই ৭ ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।
এই ৭ ছাত্রের মধ্যে একাদশ শ্রেণির অভিযুক্ত ছাত্রও ছিল, যাকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে দাবি, একাদশ শ্রেণির ছাত্রের বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়ে। তারপরই ওই ছাত্রের কয়েকজন সহপাঠীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, খুনের আগে একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্র তার বন্ধুদের বলেছিল, চিন্তা করার কোনও দরকার নেই। পরীক্ষা পিছিয়ে যাবে। স্কুলে এবার ছুটি শুরু হবে!
দু’য়ে দু’য়ে চার করতে অসুবিধা হয়নি তদন্তকারীদের। সিবিআই সূত্রে দাবি, টানা জিজ্ঞাসাবাদের মুখে, নিজের বাবার সামনে খুনের কথা কবুল করে একাদশ শ্রেণির ছাত্র।
কিন্তু, খুনে অভিযুক্ত ছাত্র কি সাত বছরের প্রদ্যুম্নকে নির্দিষ্ট করে টার্গেট করেছিল? না কি হাতের সামনে পেয়েছিল, তাই তাকে মেরে দিয়েছিল? সিবিআই সূত্রে দাবি, আটই সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত ছাত্র মনস্থির করে এসেছিল, সে কাউকে মারবে, যাতে পরীক্ষা পিছিয়ে যায়! ছোট্ট প্রদ্যুম্নর কপাল অত্যন্ত খারাপ ছিল, তাই সে অভিযুক্ত ছাত্রের নজরে পড়ে গিয়েছিল! সিবিআই সূত্রে দাবি,অভিযুক্ত ছুরি নিয়ে স্কুলের গ্যালারির কাছে অপেক্ষা করেছিল শিকার ধরার জন্য।ছোট্ট প্রদ্যুম্ন প্রতিদিনের মতোই সেখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল।তখন  সে অভিযুক্তের নজরে পড়ে যায়।এরপরই অভিযুক্ত ছাত্র ছোট্ট প্রদ্যুম্নকে বাথরুমে ডেকে নিয়ে যায়, তারপর গলা কেটে তাকে খুন করে বলে দাবি সিবিআই-এর।
তদন্তকারীদের দাবি, প্রদ্যুম্নকে খুনের পর শৌচাগার থেকে বেরিয়ে যায় ওই ছাত্র।
এরপর স্কুলের মালি ও এক শিক্ষককে সে নিজেই গিয়ে জানায়, শৌচাগারে এক ছাত্র অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে।
তারপরই উদ্ধার হয় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রের গলাকাটা দেহ। যদিও, অভিযুক্ত ছাত্রের পরিবার, সিবিআই-এর দাবি উড়িয়ে দিচ্ছে।