চেন্নাই:  তামিলনাডুর সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং এআইএডিএমকে নেত্রী জে জয়ললিতার শেষযাত্রায় ভগ্ন হৃদয়ের সমর্থকরা যখন সামিল হয়েছিলেন, তখনই তাঁদের সঙ্গে পা মিলিয়েছিলেন নেত্রীর আরও এক সঙ্গী। বজ্রকঠিন হৃদয়ে তিনি সকলের প্রিয় আম্মার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। তিনি হলেন আম্মার দীর্ঘদিনের ছায়াসঙ্গী শশীকলা নটরাজন।


সূত্রের খবর, এই শশীকলার বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠছে, রবিবার সন্ধেবেলা জয়ললিতার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর পরবর্তী ২৪ ঘন্টা তিনি তাঁর ১১৮ কোটির সম্পত্তি ও দলের ওপর নিজের আধিপত্য কায়েম করতে নিঃশব্দে এক অপারেশন চালিয়েছিলেন। রবিবার সন্ধে সাতটায় জয়ললিতার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের তিন ঘন্টা পর ও পনিরসিলভম সহ দলের সমস্ত নেতা-মন্ত্রীকে জানানো হয় সামান্য একটা অস্ত্রোপচার করতে হবে নেত্রীর। তারপর ভোর চারটের সময় বলা হয়, জয়ললিতাকে অস্ত্রোপচারের পর পরবর্তী চিকিত্সার জন্যে আইসিসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সময় থেকে জয়ললিতার কী হচ্ছে, সেখানে আর কোনও প্রবেশাধিকার ছিল না দলীয় সদস্য থেকে শুরু করে সমর্থক ও আমজনতার। ওই সময় নেত্রীর কাছে যেতে পেরেছিলেন শুধু শশীকলা এবং প্রাক্তন আমলা শীলা বালাকৃষ্ণনন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক সদস্য পরে জানান, তাঁরা অনেক পরে জানতে পারেন, রাতে একমো বসানো হয়েছিল। কিন্তু নেত্রী যখন জীবনযুদ্ধ করছেন, তখন সেই সোমবার সকালবেলা দলের সমস্ত মন্ত্রী বিধায়ককে জরুরি বৈঠকে ডেকে পাঠানো হয়। হাসপাতালেরই বেসমেন্টে হয় সেই বৈঠক। বৈঠকে প্রত্যেককে তিনটি সাদা পাতায় নাম লিখে সই করতে বলা হয়। জানা গিয়েছে, কেন করা হচ্ছে, এর পিছনে কী আছে, সেপ্রসঙ্গে কারও কাছে কোনও তথ্য ছিল না। এছাড়াও প্রত্যেককে একটি রেজিস্টারে সই করতে হয়েছে, কারণ, সেদিন সেখানে প্রত্যেকের উপস্থিতি বোঝানোর জন্যে।

সূত্রের খবর, সোমবার দুপুর দুটোর সময় প্রথম খবর আসে আম্মা আর নেই। এরপরই ভেঙে পড়েন দলের বহু নেতা-মন্ত্রী। তারপর তাঁদের সন্ধে ছটার সময় দেখা করতে বলা হয়। জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না পনিরসিলভম সহ দলের পাঁচ প্রবীণ মন্ত্রী। গোপন সূত্রে খবর, সেসময়ই অন্য জায়গায় এআইএডিএমকে-র অন্দরে নিঃস্তব্ধে ক্ষমতা বদল হয়ে যায়।

সোমবার সন্ধেবেলা একবার সংবাদমাধ্যমগুলো জয়ললিতার মৃত্যুর খবর ঘোষণা করলেও, হাসপাতালের তরফে সেখবর স্বীকার করা হয় না। এরপর রাত এগারোটা নাগাদ পাঁচ মন্ত্রী বিধ্বস্ত অবস্থায় ফিরে আসেন। দলের চেয়ারম্যান মধুসূদন এসে শুধু ঘোষণা করেন, দলের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন পনিরসিলভম। এরপর দলের সমস্ত নেতা-মন্ত্রীরা রাজভবনে যান নতুন মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে। সেখানে সবকিছু প্রস্তুতই ছিল। শপথগ্রহণের ঠিক তিরিশ মিনিট পর জয়ললিতার মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করা হয়।

যদিও এই বৈঠক এবং পুরো অপারেশনের কথা দলের কোনও সদস্য প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি। এআইএডিএমকে-র রাজ্যসভার সাংসদ ভি মৈথিয়ান দাবি করেন, শশীকলা কোনও দিনই সরকার বা দলের মধ্যে কোনও ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেননি। বরং ১৯৮০ সাল থেকে তিনি ছিলেন জয়ললিতার ছায়াসঙ্গী এবং দলকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাই ক্ষমতা জয়ললিতার অনুপস্থিতিতে খুব অনায়সেই বদল হয়ে যায় শশীকলার নেতৃত্বে।