চেন্নাই: তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নিলেন শশীকলা-ঘনিষ্ঠ এডাপাড্ডি কে পালানিস্বামী। বৃহস্পতিবার, রাজভবনে রাজ্যপাল সি বিদ্যাসাগর রাও তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। ও পনীরসেলভমের ইস্তফার পর থেকে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক জটিলতার আপাতত অবসান হল। যদিও, ১৫ দিনের মধ্যে তাঁকে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ দিতে হবে।
এদিন ৬৩ বছরের পালানিস্বামী এবং মন্ত্রিসভার ৩১ জবন সদস্যকে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়।জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের পাশাপাশি অর্থ ও স্বরাষ্ট্র দফতর নিজের হাতে রেখেছেন পালানিস্বামী। এছাড়া পুর্ত, হাইওয়ে এবং ছোট বন্দর দফতরও নিজের হাতেই রেখেছেন তিনি।
গত ৯ মাসে এই নিয়ে তিন এআইএডিএমকে নেতা মুখ্যমন্ত্রী হলেন এই দক্ষিণী রাজ্যে। এর থেকেই স্পষ্ট, জয়ললিতার মৃত্যুর পর থেকে ঠিক কী পরিমাণ রাজনৈতিক অস্থির অবস্থায় ছিল তামিলনাড়ু। ২০১৬ সালে মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় ফেরেন 'আম্মা' জয়ললিতা।
গত ডিসেম্বরে মৃত্যু পর্যন্ত তিনিই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জয়ললিতার মৃত্যুর কয়েকদিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ও পনীরসেলভমের নাম দলের তরফে ঘোষণা হয়। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে জয়ললিতার জেলযাত্রার সময়ও মুখ্যমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব সামলেছিলেন জয়া-অনুগামী পনীরসেলভম।
তাই এবারও, তার অন্যথা হয়নি। পরে চলতি মাসে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শশীকলা নিযুক্ত হতেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান পনীরসেলভম। কিন্তু, ঠিক দুদিনের মধ্যেই শশীকলার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে জানান, তাঁকে জোর করে সরানো হয়েছে।
এখান থেকেই শাসক দলের রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়। পনীরসেলভম এ-ও জানান, মানুষ তাঁকে সমর্থন দিলে তিনি ফের মুখ্যমন্ত্রী হতে আগ্রহী। এর মধ্যেই, গত ৯ তারিখ রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠন করার দাবি করেন শশীকলা।
ফের নাটকে নতুন মোড়। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি মামলায় শীর্ষ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন শশীকলা। তাঁর তার বছরের হাজতবাস হয়। তবে, জেলে যাওয়ার আগে নিজের বিশ্বস্ত অনুগামী পালানিস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেন।
এর বিরুদ্ধে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হন পনীরসেলভম। অভিযোগ করেন, জোর করে বিধায়কদের আটকে রেখেছে শশীকলা-শিবির। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে পনীরসেলভম দাবি করেন, বেশ কয়েকজন বিধায়ককে অপহরণ করে জোর করে গোল্ডেন বে রিসর্টে আটকে রাখেন শশীকলা ও তাঁর দলবল। তাঁদের মানসিক সমর্থন পনীরসেলভমের দিকে, তাই রাজ্যপাল তাঁকেই সরকার গড়তে ডাকুন। তবে তার আগে ‘মুক্ত’ করুন রিসর্টে থাকা বিধায়কদের।
অন্যদিকে, পালানিস্বামীও দেখা করে যান রাজ্যপালের সঙ্গে। বলেন, তাঁর সঙ্গে ১২৪ জনের সমর্থন রয়েছে। উল্টোদিকে ও পনীরসেলভম শিবিরের সঙ্গে ছিল খাতায় কলমে ৮ বিধায়কের সমর্থন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থন পালানিস্বামীর দিকে থাকায় পালানিস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে রাজ্যপাল আমন্ত্রণ জানান।
এদিকে, পালানিস্বামী শপথ নিতেই, গোল্ডেন বে রিসর্ট থেকে এক এক করে বেরোতে শুরু করেছেন দলীয় বিধায়করা। গত আটদিন ধরে, এখানেই তাঁরা ছিলেন। এখন বকলমে জেল থেকে শশীকলাই রাজপাট চালাবেন কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।