নয়াদিল্লি:  বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা পেতে আধার নম্বর জমা দেওয়ার মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করার কথা সুপ্রিম কোর্টে জানাল কেন্দ্র। বুধবার,  প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের সামনে অ্যাটর্নি জেনারেল কে বেণুগোপাল জানান, বর্তমানে এই সময়সীমা ৩০ সেপ্টেম্বর রয়েছে। তাকেই বৃদ্ধি করে ৩১ ডিসেম্বর করা হয়েছে।


প্রসঙ্গত, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধার জন্য আধার কার্ডকে বাধ্যতামূলক করার যে সিদ্ধান্ত কেন্দ্র নিয়েছে, তার বিরোধিতা করে শীর্ষ আদালতে একাধিক আবেদন জমা পড়ে। প্রবীণ আইনজীবী শ্যাম ডিভান আধার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিভিন্ন আবেদনকারীর আবেদন নিয়ে আদলতের কাছে এই মামলার শীঘ্র নিষ্পত্তির দাবি করেন।


বিচারপতি দীপক মিশ্র ছাড়াও ডিভিশন বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি অমিতাভ রায় এবং বিচারপতি এম খানউইলকর। আইনজীবী ডিভান যখন মামলার শীঘ্র নিষ্পত্তির দাবি তোলেন তখনই তাঁকে সরকার পক্ষের আইনজীবী সময়সীমা বৃদ্ধির কথা জানান। এরপরই, বিচারপতি দীপক মিশ্র মন্তব্য করেন, তাড়াতাড়ি করে এখনই আধার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রায়দানের প্রয়োজন নেই। কারণ, অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, কেন্দ্র আধার-লিঙ্ক সংক্রান্ত সময়সীমা ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করেছে। বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, কেন্দ্র মেয়াদবৃদ্ধির ফলে এখন এই সংক্রান্ত সকল আবেদনের শুনানি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হবে।


এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, গত ৭ জুলাই, সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ জানায়, আধার-সংক্রান্ত সব মামলার শুনানি বৃহত্তর বেঞ্চে হবে। সেই মতো, গত ১২ জুলাই এই মামলা সংক্রান্ত এক শুনানিতে দেশের শীর্ষ আদালত জানায়, পাঁচ বিচারপতি বিশিষ্ট সাংবিধানিক বেঞ্চের সামনে এই মামলার শুনানি হবে। সেই সঙ্গে আধার বাধ্যতামূলক হলে গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হবে বলে যে দাবি উঠেছে, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।


এরপর ১৮ জুলাই নয় বিচারপতি বিশিষ্ট সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন হয়। যাঁদের দায়িত্ব হয় গোপনীয়তার অধিকার রক্ষার বিষয়টি খতিয়ে দেখা। ২৪ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানির সময় নয় বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ ঘোষণা করে, গোপনীয়তার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে এবং সেটা সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত।


এই ঐতিহাসিক রায়ের পরই আধার-সংক্রান্ত মামলায় জোর দিতে শুরু করে আবেদনকারীরা। এইমুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টে আলাদাভাবে আধার নিয়ে তিনটি মামলার শুনানি চলছে। যেখানে সরকারের আধার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই আধারের তথ্য ভাণ্ডারে লক্ষাধিক ভারতীয়র বায়োমেট্রিক তথ্য রেকর্ড করা আছে।


সরকারের দাবি, আধারের সমস্ত তথ্য সুরক্ষিত। তবে কেন্দ্রে নির্দেশের বিরুদ্ধে যাঁরা সুপ্রিম কোর্টে গেছেন, তাঁদের দাবি, রাষ্ট্র এরমাধ্যমে দেশের জনসাধারণের ওপর পরোক্ষে নজরদারি করতে পারবে। আধার বাধ্যতামূলক করার বিরুদ্ধে যাঁরা আদালতের দ্বারস্থ, তাঁদের দাবি, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে আধার বাধ্যতামূলক করা অনুচিত। কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী যেকোনও অর্থনৈতিক লেনদেন করতে গেলেই আধার লিঙ্ক করতে হবে। এর বিপক্ষে যাঁরা সওয়াল করে আদালতে গেছেন, তাঁদের দাবি, এতে কি একজন ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হবে না?


সমস্ত সরকারি কাজে আধার-লিঙ্ক হলে সেই মৌলিক অধিকারই লঙ্ঘিত হবে কিনা, সেই মামলারই রায়দান হবে নভেম্বরে।