নয়াদিল্লি: ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর আদিত্য কুমারের বাবা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের সোপিয়ানে গুলিচালনায় অভিযুক্ত তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া এফআইআর খারিজ করা হোক। লেফটেন্যান্ট কর্নেল করমবীর সিংহের দাবি, ১০ গারওয়াল রাইফেলসে মেজর পদে কর্মরত তাঁর ছেলেকে 'অন্যায়ভাবে, একপেশে' এফআইআরে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যে ঘটনার জেরে এফআইআর হয়েছে, সেটি সেনাবাহিনীর সামরিক কর্তব্যরত পালনে থাকা সেনার কনভয়কে ঘিরে। কনভয়টি কাজ করছিল সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইনের (আফস্পা)আওতাভুক্ত এলাকায়। ওই কনভয়কে বিশৃঙ্খল, মারমুখী জনতা পাথর ছুঁড়তে ছুঁড়তে কোণঠাসা করে ফেলে,  পাথরের ঘায়ে ক্ষতি হয় সেনার গাড়ির।

প্রসঙ্গত, সোপিয়ানের গানোভপোরা গ্রামে পাথর ছুঁড়তে থাকা লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে সেনা জওয়ানরা গুলি চালালে দুজন সাধারণ নাগরিক নিহত হন। ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। মেজর আদিত্য সহ সেনার ১০ গারওয়াল ইউনিটের সদস্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়, রণবীর পেনাল কোডের ৩০২ (খুন) ও ৩০৭ (খুনের চেষ্টা) ধারায়।

কর্নেল করমবীরের সওয়াল,  সেনা জওয়ানদের জীবন, সেনার সম্পত্তি রক্ষা করাই উদ্দেশ্য ছিল তাঁর ছেলের। 'সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত হিংস্র, বন্য জনতার রোষ থেকে নিরাপদে পালানোর রাস্তা করতেই' গুলি চালাতে হয়। উত্তেজিত জনতাকে আবেদন করা হয়েছিল, যাতে তারা সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব পালনে বাধা না দেয়, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট না করে, পাথর ছোঁড়া বন্ধ করে চলে যায়। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় প্রথমে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। কিন্তু 'বেআইনি ভাবে জড়ো হওয়া' অশান্ত জনতা তাতে কর্ণপাত করেনি। তারা এক জুনিয়র কমিশনড অফিসারকে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলতে যাচ্ছিল। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় শূন্যে গুলি চালানো হয়।
জম্মু ও কাশ্মীরে কোন পরিস্থিতির মধ্যে সেনাবাহিনীকে জনতাকে সামলাতে হয়, বোঝাতে তিনি গত বছরের ডিএসপি মহম্মদ আয়ুব পন্ডিতাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার উল্লেখ করেন।
পিটিশনে বলা হয়েছে, যে ভাবে এফআইআর দায়ের হওয়ার বিষয়টিকে রাজ্যের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে রাজ্যে বিদ্যমান প্রতিকূল পরিস্থিতিরই প্রতিফলন রয়েছে। এই অবস্থায় আবেদনকারীর সামনে তাঁর নিজের ও ছেলের সংবিধানের ১৪ ও ২১ অনু্চ্ছেদে সুরক্ষিত মৌলিক অধিকার রক্ষায় সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদবলে এই আদালতে আবেদন করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
তিনি পিটিশনে দাবি করেন, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে গিয়ে বৈধ পদক্ষেপ করে যাতে সেনা জওয়ানদের ফৌজদারি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে হেনস্থা ভোগ করতে না হয়, সেজন্য তাঁদের অধিকার রক্ষায় ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের জন্য গাইডলাইন জারি করতে হবে।
যেসব লোক সন্ত্রাসবাদে যুক্ত, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করার দাবিও করেছেন ওই কর্নেল।