নয়াদিল্লি: প্রবীণ সাংবাদিক তথা রাইজিং কাশ্মীরের সম্পাদক সুজাত বুখারিকে হত্যার মাধ্যমে পাকিস্তানপন্থী শক্তিগুলি ফের আঘাত হেনেছে জম্মু ও কাশ্মীরে। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ ও ইন্টেলিজেন্ট ব্যুরোর প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বুখারির হত্যার পিছনে লস্কর-ই-তৈবা ও হিজবুল মুজাহিদিনের যোগসাজশ।
সূত্রের খবর, পূর্বপরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে বুখারিকে। পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর নির্দেশে জঙ্গিরা তাঁকে খুন করেছে। এ ব্যাপারে স্পষ্ট চিত্র পেতে পুলিশ বুখারির সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি খতিয়ে দেখছে।


সূত্রের খবর, এমন কিছু যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে যেখানে দেখা গিয়েছে যে, বুখারির লেখার সমালোচক ছিল কিছু পাকিস্তানি গোষ্ঠী এবং ভারত সরকারের পক্ষে সামঞ্জস্যপূর্ণ অ্যাজেন্ডার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ইউনাইটেড জিহাদ কাউন্সিল তাঁকে হুমকি দিয়েছিল।
আইবি সূত্রের খবর, একজন হত্যাকারী যে বুখারিকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল, সে সম্ভবত পাকিস্তানি লস্করের লোক নাভিদ জাট। এর আগে শ্রীনগরের হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল নাভিদ। এখন সে হিজবুলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এবং লস্করের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখেছে।
সিসিটিভি ফুটেজে আততায়ীদের মধ্যে মাঝে যে বসেছিল, তার উচ্চতা, চালচলন নাভিদের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। পুরো বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। কারণ, এটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ। ঘটনার তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে চলছে।
আততায়ীদের দলে আরও যে দুজন ছিল তাদের একজন লস্করের মেহরাজউদ্দিন বাঙ্গারু এবং অন্যজন ওয়াজা। দুজনেই পুলওয়ামার বাসিন্দা।
এখন প্রশ্ন বুখারি জঙ্গিদের নিশানা হলেন কেন?
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বুখারি ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক। সেইসঙ্গে তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের বিজেপি-পিডিপি জোট সরকারের মন্ত্রী বাশারাত বুখারির ভাই। বাশারাতের উত্থান পিডিপি-র মধ্যে বুখারির প্রভাব বাড়িয়ে দিয়েছিল। সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির কাছাকাছি চলে এসেছিলেন তিনি। বুখারির হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের ওপর সরাসরি আঘাত হানা যাবে বলে মনে করেছে আইএসআই।
এক পদস্থ গোয়েন্দা আধিকারিক বলেছেন, ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে পাকিস্তানের সঙ্গে ট্র্যাক ২ আলোচনা প্রক্রিয়ার অঙ্গ ছিলেন বুখারি। ইস্তানবুল ও দুবাইয়ে বৈঠকও হয়েছিল। ওই বৈঠকগুলি থেতেই রামজানের সময়ে কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতির ধারণা উঠে এসেছিল। এ কারণেই তাঁকে নিশানা করা হতে পারে।
ইউনাইডেট জিহাদ কাউন্সিল প্রকাশ্যেই বুখারিকে আক্রমণ শানিয়েছিল। তারা বলেছিল, রাজ্যে কাশ্মীরীদের মুখপাত্র হিসেবে কে তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছে।
এখন বড় প্রশ্ন হল, সরকার কি জম্মু ও কাশ্মীরে অভিযান বন্ধ রাখার সময়সীমা বাড়াবে। সরকারি সূত্রের খবর, এখন চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে যে, ইদের পর আর এই সীমা বাড়ানো হবে না।
ইদের পরই নিরাপত্তা বাহিনী অপারেশন অল আউট শুরু করবে।
বুখারির হত্যা ও সেনা জওয়ানকে অপহরণের ঘটনার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের মতো অভিযান বন্ধ রাখার সমর্থকরা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছেন।
রাজনাথ জানিয়েছেন,অভিযান ১৬ তারিখ পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে তিনি ১৭ জুন কথা বলবেন।