ভোপাল: গ্রেফতার হওয়ার চার ঘণ্টা পরে জামিন নিলেন রাহুল গাঁধী। মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে তাঁকে যেতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল প্রশাসন। সদলবলে জোর করে সেখানে ঢোকার চেষ্টা করে মধ্যপ্রদেশ সীমানাতেই আটক হন কংগ্রেস সহ সভাপতি। গ্রেফতার হওয়ার সময় রাহুল তীব্র আক্রমণ করেন মধ্যপ্রদেশ সরকার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। মন্দসৌরে কৃষকের মৃত্যুর জন্য মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান ও মোদী, দুজনেই দায়ী বলে অভিযোগ করেন। বলেন, বড়লোকদের দেড় লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করতে পারেন, কিন্তু চাষিদেরটা করতে পারেন না মোদী। চাষীদের ফসলের ন্যয্য দর, বোনাস দিতে পারেন ন, ক্ষতিপূরণও দিতে পারেন না, দিতে পারেন শুধু বুলেট।


রাহুলের সঙ্গে গ্রেফতার হন রাজস্থান কংগ্রেস সভাপতি সচিন পাইলট, মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস বিধায়ক জয়বর্ধন সিংহ সহ কয়েকশ কংগ্রেস কর্মী। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি সিমেন্ট কোম্পানির অতিথিশালায়। পরে অবশ্য সবাইকেই ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। ধীরে ধীরে মন্দসৌরের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

এদিন একটি চার্টার্ড হেলিকপ্টারে করে দিল্লি থেকে রাজস্থানের উদয়পুরে আসেন রাহুল। সেখান থেকে সড়কপথে মধ্যপ্রদেশের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। চিতোরগড় জেলার নিমাডেহা শহরে রাস্তা বদলে মন্দসৌরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। মোটর বাইকে সওয়ার হয়ে  ৬-৭ কিমি পথ পেরিয়ে মধ্যপ্রদেশের সীমানায় পৌঁছন তিনি। রাহুল পায়ে হেঁটেও কিছুটা পথ পেরোন। রাহুলের সঙ্গে ছিলেন রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সচিন পাইলট, দিগ্বিজয় সিংহ, গিরিজা ব্যস, কমলনাথ সহ দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। মধ্যপ্রদেশ সীমানায় রাহুল ঢুকতে না দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীদের ধস্তাধস্তি বেধে যায়।

মধ্যপ্রদেশ পুলিশ সীমানাতেই নিমচেতে তাঁকে আটক করে। পুলিশ তাঁকে নিহত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ রাহুল। তিনি কৃষকদের মৃত্যুর জন্য মোদী সরকারকে দায়ী করেছেন।

কৃষক আন্দোলনে উত্তাল মন্দসৌরে যাওয়ার কথা গতকালই জানিয়েছিলেন কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গাঁধী। গতকাল সন্ধেতে রাহুল টুইট করে বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে যে কৃষকেরা মারা গিয়েছেন, আগামী কাল মন্দসৌরে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করব।’ কিন্তু তাঁকে মন্দসৌরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে আজ সকালে জানিয়ে দেন নিমচের পুলিশ সুপার মনোজ কুমার সিংহ।মনোজ কুমার সিংহ বলেছেন, জেলার পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ। সেজন্যই রাহুলকে জেলা সফরের অনুমতি দেওয়া হবে না। যদি তিনি মন্দসৌরে ঢোকার চেষ্টা করেন তাহলে তাঁকে আটক করা হবে।

অশান্ত মন্দসৌরে যে রাহুলের আসার অনুমতি দেওয়া হবে না,তা প্রশাসন সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিস, এখানকার পরিস্থিতি যে রকম অগ্নিগর্ভ, তাতে কোনো ভিআইপি-কেই মন্দসৌরে আসার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।

এদিকে, মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে কৃষক বিক্ষোভে পুলিশের গুলি ও ৫ কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে সরিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। নিমচের এসপিকে দেওয়া হয় মন্দসৌরের দায়িত্ব। শিবপুরীর জেলাশাসককে মন্দসৌরের জেলাশাসক পদে আনা হয়েছে।
কৃষিপণ্যে সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি এবং ঋণ মকুবের দাবিতে মন্দসৌরে এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন কৃষকরা। অভিযোগ, মঙ্গলবার বিক্ষোভকারী কৃষকদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। মৃত্যু হয় পাঁচজনের। এরপরই আন্দোলন তীব্র আকার নেয়। ভাঙচুর করা হয় গাড়ি, তাতে আগুনও ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। তাদের বোঝাতে গিয়ে গতকাল নিগৃহীত হন মন্দসৌরের জেলাশাসক।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনকে। গতকাল সারাদিনই অশান্ত ছিল মন্দসৌর। জেলায় ১,১০০ দাঙ্গা-মোকাবিলা পুলিশ পাঠিয়েছে কেন্দ্র।
এদিকে, প্রাথমিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, পুলিশ গুলি চালায়নি। কিন্তু গতকাল আইজি স্বীকার করেন যে, গুলি চালিয়েছিল পুলিশ।