উদয়পুর: তেলের কয়েকটা ফাঁকা ড্রাম ছিল বাড়িতে। সেগুলো দিয়েই টেবিল বানিয়ে নিয়েছিলেন। গোয়ালঘরের এক কোণে সেই ড্রামের টেবিল পেতেই পড়াশোনা করতেন। রাজস্থানে দুধওয়ালার মেয়ে সোনাল শর্মা এবার বিচারপতি হতে চলেছেন।

২০১৮ সালে রাজস্থান জুডিশিয়াল সার্ভিস (আরজেএস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে উদয়পুরের দুধওয়ালার মেয়ে সোনাল শর্মা এখন বিচারক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২৬ বছরের সোনাল আজীবন গোশালায় বসেই পড়াশোনা করেছেন। তবে তাতে তাঁর পড়াশোনা বা মনঃসংযোগে কোনও ঘাটতি পড়েনি। যার প্রতিফলন সোনালের রেজাল্টে। বিএ, এলএলবি, এলএলএম – সব পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন তিনি। তারপর এক বছর প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। খবরে প্রকাশ, তাঁকে রাজস্থানের সেশন কোর্টে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের পদে নিয়োগ করা হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে পরীক্ষার ফল বেরিয়েছিল। তবে সোনাল ওয়েটিং লিস্টে ছিলেন। জেনারেলদের জন্য যে কাট অফ মার্ক নির্ধারিত রয়েছে, তার চেয়ে মাত্র এক নম্বর কম ছিল তাঁর। তবে ভাগ্য সোনালের সঙ্গ দিয়েছে। মূল তালিকা থেকে কয়েকজন চাকরিতে যোগ না দেওয়ায় ওয়েটিং লিস্ট থেকে সোনালকে নির্বাচিত করে প্রশাসন। তাঁকে কাজে যোগ দিতে বলা হয়। সোনালের মেন্টর সত্যেন্দ্র সিংহ সাঙ্খলা জানিয়েছেন, সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গিয়েছেন তাঁর ছাত্রী।

অভাবী ঘরের মেয়ে সোনাল। প্রাইভেট টিউশন নেওয়ার বা বইপত্র কেনার সামর্থ্যও সব সময় হয়নি তাঁর। তিনি সাইকেলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ক্লাস শুরুর আগে কলেজে পৌঁছে যেতেন। যাতেন কলেজের লাইব্রেরিতে তিনি পড়াশুনা করতে পারেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, গোয়ালঘরের এক কোণে খালি তেলের ক্যান দিয়ে তৈরি একটি অস্থায়ী টেবিল পেতে তিনি পড়াশোনা করতেন। সেই সঙ্গে সময় পেলেই গরুদের দেখাশোনাও করেছেন।

সোনাল নিজের সাফল্যে খুশি। বলছেন, "বেশিরভাগ সময় আমার চটিতে গোবর লেগে থাকত। স্কুলে পড়ার সময় সহপাঠীদের বলতে গিয়ে আমি লজ্জা পেতাম যে, আমি একজন দুধওয়ালার পরিবার থেকে এসেছি। তবে এখন আর কোনও লজ্জা বা ইতস্তত বোধ হয় না। এখন আমি আমার বাবা-মাকে নিয়ে গর্ব বোধ করি।"