নয়াদিল্লি: ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় শিবসেনা সুপ্রিমো বালাসাহেব ঠাকরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত করার বিষয়টি ভাল চোখে দেখেননি সনিয়া গাঁধী। ক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। নিজের বইতে এমনটাই দাবি করলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।


সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির লেখা বই ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স’। সেখানে প্রণববাবু লিখেছেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শরিক এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ারের পরামর্শেই তিনি বাল ঠাকরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।


বইয়ে প্রণববাবু জানান, ২০১২ সালের ১২ জুলাই, নির্বাচনের প্রচারের অঙ্গ হিসেবে মুম্বই গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে বাল ঠাকরের বাসভবন ‘মাতোশ্রী’-তে গিয়ে ক্ষণিক সাক্ষাত করেন দুজন। এর আগে, অবশ্য, এনডিএ-শরিক হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনে ইউপিএ প্রার্থী প্রণববাবুকে সমর্থন করার ঘোষণা করেছিলেন বাল ঠাকরে।


প্রণববাবু লিখেছেন, সনিয়া গাঁধীর অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও আমি বাল ঠাকরের সঙ্গে দেখা করি। কারণ, আমার মনে হয়েছিল, যে ব্যক্তি নিজের জোটকে অগ্রাহ্য করে আমাকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁকে অসম্মান করা ঠিক নয়।


প্রণববাবু স্মরণ করে জানান, তিনি সনিয়া ও শরদ—দুজনের কাছেই এই প্রসঙ্গে তাঁদের পরামর্শ চেয়েছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, ঠাকরের সঙ্গে দেখা করা উচিত কি না। প্রণববাবুর দাবি, সনিয়া ও পওয়ার—দুজন ভিন্ন মত দেন।


মূলত, পওয়ারের জন্যই শিবসেনা সুপ্রিমো সেই সময় প্রণববাবুকে সমর্থন করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। বিষয়টিকে মাথায় রেখে শরদ পওয়ার প্রণববাবুকে জানান, মুম্বই গিয়ে তিনি যদি দেখা না করেন, তাহলে ঠাকরে তা ব্যক্তিগত অপমান হিসেবে ধরবে।


অন্যদিকে, সনিয়া গাঁধীর পরামর্শ ছিল, সম্ভব হলে এই সাক্ষাত এড়াতে। কারণ, বাল ঠাকরের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে কিছু বিরুপ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সনিয়ার। প্রণব যোগ করেন, সাক্ষাতের পর তিনি দিল্লি ফিরলে কংগ্রেস নেতা গিরিজা ব্যাস জানান, ঠাকরের সঙ্গে তাঁর বৈঠক নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সনিয়া গাঁধী ও তাঁর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল।


প্রণববাবু বলেন, আমি দিল্লি ফিরে আসার পরের দিন, গিরিজা ব্যাস আমাকে ফোন করেন। তিনি জানান, বাল ঠাকরের সঙ্গে আমার দেখা করার ইস্যুটি নিয়ে অসন্তুষ্ট সনিয়া গাঁধী ও আহমেদ পটেল। প্রণব তাঁর বইয়ে লিখেছেন, আমি বুঝতে পারছিলাম, কেন তাঁরা অসন্তুষ্ট। কিন্তু, যেমনটা বলেছি, আমি সেটাই করেছি, যা ঠিক মনে হয়েছে। কারণ, শরদ পওয়ারের পরামর্শও আমাকে মাথায় রাখতে হয়েছিল।


প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি যোগ করেন, নির্বাচনে তাঁকে সমর্থন করেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সময় পওয়ারও যদি শিবসেনার সমর্থন আদায় না করতে পারতেন, তা হলে ইউপিএ-র পক্ষে তা সুখকর হত না। কারণ, সেই সময় কেন্দ্রে আরও ২ বছর বাকি ছিল ইউপিএ-র। এমনিতেই, কংগ্রেসের ওপর চাপা ক্ষোভ ছিল পওয়ারের মনে। তা সত্ত্বেও উনি যা সহায়তা করেছেন, আমি তাঁকে আর বেশি দুঃখ দিতে চাইনি।


প্রণববাবু জানিয়েছেন, পরবর্তীকালে, সনিয়া গাঁধী বা আহমেদ পটেলের অসন্তোষ নিয়ে তাঁদের কাছে তিনি বিষয়টি উত্থাপন করেননি। কোনও ব্যাখ্যাও করেননি। কারণ, তাঁর মনে হয়েছিল, এখন এই নিয়ে নতুন কাটাছেঁড়া করা উচিত নয়। তবে, শরদ পওয়ারের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত যে ভীষণ ইতিবাচক ছিল, তাও বইতে উল্লেখ করেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। প্রণব জানান, সেই সময় পওয়ার তাঁকে বলেছিলেন, মারাঠা বাঘের পক্ষে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে সমর্থন করাটাই স্বাভাবিক।


প্রসঙ্গত, ২০১২ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ প্রার্থী পি এ সাংমাকে হারিয়ে জয়ী হন প্রণব মুখোপাধ্যায়। চলতি বছর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়।