তিরুঅনন্তপুরম: সমাজের চোখে তিনি প্রতিবন্ধী। কিন্তু নিজের কাঁধে সমাজের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন ৭২ বছরের এন এস রাজাপ্পন। কেরলের কোট্টায়ামের একটি হ্রদ প্লাস্টিকের বোতল মুক্ত করে চলেছেন তিনি। তাঁর মন কি বাত রেডিও ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজাপ্পনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

রাজাপ্পন পক্ষাঘাতগ্রস্ত, দুপায়ে দাঁড়াতে পারেন না তিনি। কিন্তু এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সমাজ ও পরিবেশের প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধ স্তব্ধ করতে পারেনি। বহু বছর ধরে কোট্টায়ামের ভেমবানাড হ্রদে তিনি তাঁর নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান, তুলে আনেন আমাদেরই ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া বাতিল প্লাস্টিকের বোতল। তারপর সেগুলো বিক্রি করে দেন বাতিল জিনিসপত্রের ক্রেতাদের কাছে, এভাবে হয় তাঁর দিন গুজরান। তাঁর এই নীরব সেবা আরও বহু বছর হয়তো সকলের চোখের আড়ালেই থেকে যেত, যদি না স্থানীয় এক ফটোগ্রাফার আচমকা তাঁকে নিজের ক্যামেরাবন্দি না করতেন। সেই ফটোগ্রাফারকেই রাজাপ্পন বলেন তাঁর জীবনের গল্প। নদীর ধারে তাঁর বাসের কথা, কীভাবে দুই পা টেনে টেনে প্রতিদিন কোনওমতে নৌকায় গিয়ে ওঠেন, সে কথা।


তাঁর খবর চোখে পড়ে স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রীর। তিনি তাঁর মন কি বাত রেডিও অনুষ্ঠানে রাজাপ্পনের কথা উল্লেখ করেন, বলেন, কীভাবে একক প্রচেষ্টায় কেরলের একটি হ্রদ প্লাস্টিকমুক্ত করার গুরুদায়িত্ব পালন করে চলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেরল থেকে আরও একটা খবর আমার কাছে এসেছে, যা আমাদের দায়িত্ববোধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কেরলের কোট্টায়ামে এক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ মানুষ রয়েছেন, তাঁর নাম এন এস রাজাপ্পন। পক্ষাঘাতের কারণে তিনি হাঁটতে পারেন না। কিন্তু পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার জন্য তাঁর প্রচেষ্টায় তাতে ছেদ পড়েনি। বহু বছর ধরে তিনি ভেমবানাড হ্রদ একার হাতে পরিচ্ছন্ন রেখেছেন। ভাবুন, কত উচ্চ চিন্তা তাঁর! আমাদের সকলের তাঁর থেকে প্রেরণালাভ করা উচিত, চেষ্টা করা উচিত, আশপাশ যত দূর সম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখা।

প্রধানমন্ত্রীর মুখে তাঁর কথা জানার পর ৭২ বছরের রাজাপ্পনের ভাগ্য ফিরতে চলেছে। শ্রীকুমার নামে এক অনাবাসী ব্যবসায়ী তাঁকে একটি মোটরবোট কিনে দিয়েছেন। ববি চেম্মান্নুর নামে কেরলের জনৈক শিল্পপতি তাঁকে একটি বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।