শ্রীনগর: ফের কাশ্মীরি যুবকদের মধ্যে নাশকতার পথে পা বাড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করল কেন্দ্র।


সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এমন তথ্যই ধরা পড়েছে। রিপোর্ট বলছে, ২০১০ সালের পর থেকে এই প্রথম কাশ্মীরিদের মধ্যে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিতে যোগ দেওয়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে।


কেন্দ্রীয় সূত্রের মতে, ২০১৬ সালে জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিল ৮৮ কাশ্মীরি যুবক। চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত সেই সংখ্যা ১১৭ ছুঁয়েছে।


এর মধ্যে, দক্ষিণ কাশ্মীর থেকে জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। প্রসঙ্গত, হিজবুল মুজাহিদিন ও লস্কর-এ-তৈবা সহ একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠীর মূল নিয়োগস্থল হল দক্ষিণ কাশ্মীর।


সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এলাকার ভিত্তিতে দক্ষিণ কাশ্মীরের যে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে সব কাশ্মীরি যুবক জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছে, তাদের পরিসংখ্যান কিছুটা এরকম— ১২ জন অনন্তনাগ, ৪৫ জন পুলওায়ামা ও অবন্তিপোরা, ২৪ জন শোপিয়ান এবং ১০ জন কুলগামের বাসিন্দা।


অন্যদিকে, উত্তর কাশ্মীরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কুপওয়ারা থেকে ৪ জন, বারামুল্লা ও সোপোর থেকে ৬ জন এবং বান্দিপোরা থেকে ৭ জন জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছে।


আবার মধ্য কাশ্মীরে শ্রীনগর থেকে পাঁচজন এবং বাডগাম থেকে ৪ জন জঙ্গি-খাতায় নাম লিখিয়েছে বলে জানা গিয়েছে সরকারি নথিতে।


বিগত ৭ বছরের তথ্য তুলনা করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্তাদের দাবি, ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক যুবক জঙ্গি পথ বেছে নিয়েছে।


গত মার্চ মাসে সংসদে যে তথ্য পেশ করা হয়েছিল, সেই অনুযায়ী, ২০১৪ সাল ইস্তক উপত্যকার যুবকদের মধ্যে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার প্রবণতা ক্রমবর্ধমান।


পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালে জঙ্গি গোষ্ঠীতে নাম লিখিয়েছিল ৫৪ জন। ২০১১ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২৩। ২০১২ সালে ২১, ২০১৩ সালে ১৬। এরপর ২০১৪ সালে তা ফের বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩। ২০১৫ সালে ৬৬ এবং ২০১৬ সালে ৮৮।


গোয়েন্দাদের দাবি, গত বছরের ৮ জুলাই নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে এনকাউন্টারে হিজবুল মুজাহিদিনের ‘পোস্টার বয়’ বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর এই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।


সরকারি পরিসংখ্যান আরও বলছে, নয়ের দশকের তুলনায় এখন জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়া যুবকদের সঙ্গে বর্তমান যুবকদের বিস্তর ফারাক। কারণ, এখন যুবকরা অনেক বেশি ওয়াকিবহাল। ফলে, সব ধরনের পরিণতি জানা সত্ত্বেও তারা অস্ত্র তুলে নিচ্ছে।


পরিসংখ্যান আরও বলছে, এখন বহু মেধাবী ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পারবারিক অবস্থাসম্পন্ন ঘর থেকেও যুবকরা নাশকতার পথ বেছে নিচ্ছে। যা আগে দেখা যেত না।


 যদিও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা রিপোর্ট খারিজ করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ প্রধান এস পি বৈদ। তাঁর পাল্টা দাবি, কেন্দ্রীয় রিপোর্ট সঠিক পরিসংখ্যান তুলে ধরেনি। তাঁর মতে, কাশ্মীরে নাশকতা কমছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবক হচ্ছে।