চণ্ডীগড়: ১৯৯৬ সালে এক দুর্ঘটনায় শিরদাঁড়ায় চোট পাওয়ার পর থেকে শরীরের ৯০ শতাংশই বিকল। প্রতিদিন ব্যথা কমানোর ওষুধ খেতে হয়। হুইল চেয়ার ছাড়া কোথাও যেতে পারেন না। কিন্তু ৪৭ বছর বয়সি এই ব্যক্তির জন্যই সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য ও জাতীয় সড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে মদের দোকান নিষিদ্ধ করেছে। শীর্ষ আদালতের এই রায়ে তাঁর জয় হওয়ায় তৃপ্ত হরমন সিধু।
১৯৯৬ সালের ২৪ অক্টোবর হিমাচল প্রদেশ থেকে গাড়িতে চণ্ডীগড়ের বাড়িতে ফিরছিলেন হরমন। তিনি পিছনের আসনে ছিলেন। এর আগে তাঁরা শ্রীমাউর জেলার চাঁদনিতে রাস্তায় একটি চিতাবাঘ দেখেছিলেন। ফের সেই চিতাবাঘ দেখার আশায় ওই পথেই ফিরছিলেন। কিন্তু তাঁদের গাড়ি খাদে পড়ে যায়। বন্ধুদের তেমন কোনও আঘাত না লাগলেও, হরমন গুরুতর জখম হন।
এই ঘটনাই হরমনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বদলে দিয়েছে। তাঁকে প্রায় দু বছর হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিল। এই সময় তিনি দেখতে পান, বেশিরভাগ আহত মানুষই পথ দুর্ঘটনার শিকার। ২০০৬ সালে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গঠন করেন হরমন। ২০১২ সালে তিনি পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে মামলা করেন। ২০১৪ সালের মার্চে হাইকোর্ট রায় দেয়, রাজ্য ও জাতীয় সড়কের ধারে মদের দোকান বন্ধ করতে হবে। ৬ দিন পরে পঞ্জাব ও হরিয়ানা সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে। এই দুই রাজ্য সরকার বলে, জাতীয় সড়কের ধারে মদের দোকান বন্ধ করা হলেও, রাজ্য সড়কের ধারের দোকানগুলি খোলা রাখা হোক। গত বছরের ডিসেম্বরে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। এরপর থেকেই অভিনন্দনের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছেন হরমন।
লক্ষ্য সফল হলেও, হরমনের লড়াইটা সহজ ছিল না। তাঁকে মামলা লড়ার জন্য ৯ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থানে ৫০ হাজার কিমি ঘুরতে হয়েছে। মামলা করায় হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছে। এক ব্যক্তি ফোন করে ২৫ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন। জাতীয় ও রাজ্য সড়কের ধারে মদের দোকানের সংখ্যা জানতে চেয়ে কূটনৈতিক স্তর থেকেও ফোন এসেছিল। এক ব্যক্তি ফোন করে জানান, পানিপথ থেকে জলন্ধর পর্যন্ত ২৯১ কিমি পথে ১৮৫টি মদের দোকান আছে। বিভিন্ন মহল থেকে বিরোধিতা এলেও, মানুষের সমর্থনও পেয়েছেন হরমন। এরই ফলে তিনি লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন।
হরমনের দাবি, মদের দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কেউ কর্মহীন হয়ে পড়বেন না। কারণ, রেস্তোরাঁয় মানুষ শুধু মদ্যপান করতে যান না। ফলে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়।
জাতীয় ও রাজ্য সড়কে মদের দোকান বন্ধ হয়েছে। এবার হরমনের নতুন লড়াই। গত বছর অমৃতসরের কাছে নালায় পড়ে যায় একটি স্কুলবাস। সাত পড়ুয়ার মৃত্যু হয়। এরপর খোঁজ নিয়ে হরমন জানতে পারেন, ১০০টি সেতুতে রেলিং নেই। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন হরমন। এ মাসের ১০ তারিখ সেই মামলা শুনানি।
হাইওয়েতে মদের দোকান বন্ধের পিছনে ইনিই- হরমন সিধু
Web Desk, ABP Ananda
Updated at:
02 Apr 2017 07:07 PM (IST)
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক
দেশ (nation) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -