কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল এই মামলায় প্রধান বিচারপতির সামনে বলেন, বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চের রায়টি ‘গভীর উদ্বেগজনক’, ‘এক বিপজ্জনক নজির’ সৃষ্টি করবে। এই বক্তব্য গ্রহণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি রায়ে উল্লেখ করেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল আমাদের গোচরে এনেছেন যে, বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চের ১৯ জানুয়ারির রায়ে পকসো আইনের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে এই যুক্তিতে অভিযুক্তকে ছাড় দিয়েছে যে, সরাসরি কোনও শারীরিক ্যস্পর্শ না হওয়ায় পকসোর আওতায় তার কোনও যৌন নিগ্রহের অভিপ্রায় প্রমাণিত হয়নি। এই রায় অভূতপূর্ব, খারাপ নজির স্থাপন করতে পারে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আমরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে যথাযথ পিটিশন দাখিল করতে তাঁকে অনুমতি দিচ্ছি। পাশাপাশি অভিযুক্তের অব্যাহতির নির্দেশ স্থগিত রাখা হচ্ছে।
তিন মহিলা ও দি ইউথ বার অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া সংগঠন নাগপুর বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন। গোটা সমাজে ও জনমানসে ওই রায়ের বিরাট প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে সওয়াল করা হয় তাদের পিটিশনে।
ত্বকের সঙ্গে সংস্পর্শ না হলে তা যৌন নির্যাতন বলে বিবেচিত হবে না। গোপনাঙ্গ স্পর্শ না করলে পকসো আইনের আওতায় পড়বে না। একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই রায় দিয়েছিলেন বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চের বিচারপতি পুষ্প গান্ডিওয়ালা। এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১২ বছরের একটি মেয়ের বুক স্পর্শ করা এবং চাপ দেওয়া সহ তার জামাকাপড় খোলার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় আদালতের দ্বারস্থ হয় নাবালিকার পরিবার। অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় দায়রা আদালত। সেই রায়েই সংশোধন ঘটিয়ে নাগপুর বেঞ্চের বিচারপতি রায়ে জানান, পোশাক খুললে বা পোশাকের ভেতর দিয়ে আপত্তিজনকভাবে হাত দিলেই সেটা যৌন নিগ্রহ। ত্বকের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ না হলে তা যৌন নির্যাতন বলা যাবে না। তিনি আরও বলেন, যৌন নির্যাতন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার জন্য পেনিট্রেশন বা শিশুর শরীরে অঙ্গ প্রবেশ হতেই হবে তা নয়। যে কোনএ ধরনের যৌন স্পর্শই অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু তা পোশাকের উপর দিয়ে হলে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে জানান বিচারপতি।
মামলার শুনানিতে সরকারপক্ষের বক্তব্য ও নাবালিকার সাক্ষ্যে প্রকাশ, অভিযুক্ত নাবালিকাকে কিছু খেতে দেওয়ার নাম করে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়ে তার বুকে চাপ দেয়, জামাকাপড় খোলার চেষ্টাও করে। কিন্তু নাগপুর বেঞ্চ বলে, অভিযুক্ত যেহেতু মেয়েটির জামাকাপড় না খুলেই তাকে জাপটে ধরেছিল, তাই সেটা যৌন নিগ্রহ নয়, বরং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ অনুচ্ছেদে এক মহিলার সম্ভ্রমহানি বলা যেতে পারে।
এই রায়ে শোরগোল পড়ে যায়। শিশুদের সরল মনের সুযোগ নিয়ে প্রায়ই বুকে হাত দেওয়া বা গোপনাঙ্গে স্পর্শ করার মতো ঘটনা ঘটে। শুধু জামা কাপড়ের ভেতর দিয়েই তা হয় এমন নয়। পোশাকের উপর দিয়ে যদি তা হয়, তাহলে কি সুবিচার মিলবে না? প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে। অনেকেই বলেন, বম্বে হাইকোর্টের এই রায়ের পর পোশাক না খোলার অজুহাতে অন্যায় বাড়বে । আর এই কারণে বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা হারাবেন অভিভাবকরাও।