চেন্নাই: বিকেলের গুজবই শেষপর্যন্ত রাতে সত্যি হল। প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। বয়স হয়েছিল ৬৮। ২২ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ের হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এতদিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে যে লড়াই চলছিল, তাতে হার মানলেন জয়া আম্মা। সোমবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ প্রয়াত হলেন জয়ললিতা। সোয়া বারোটায় তাঁর মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়। তামিলনাড়ুর পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন পনিরসেলভম।


জয়ললিতার প্রয়াণে রাজনৈতিক মহল শোকস্তবদ্ধ। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী, সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা জয়ললিতার মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। তামিলনাড়ুতে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জয়ললিতার ভক্তরা শোকে ভেঙে পড়েছেন। তাঁদের বুকফাটা কান্না ও হাহাকারের ছবি তামিলনাড়ুর সর্বত্র।


রবিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন জয়ললিতা। সোমবার বিকেলে তাঁর চিকিৎসা করতে আসা লন্ডনের বিশিষ্ট চিকিৎসক রিচার্ড বিয়েল জানান, তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক।  এরই মধ্যে রটে যায়, মারা গিয়েছেন আম্মা। তাঁর দলীয় দফতরে পতাকা অর্ধনমিত হয়ে যায়। পরে অবশ্য হাসপাতালের তরফে আবার নেত্রীর মৃত্যুর জল্পনা 'একেবারে ভুয়ো' বলে জানানো হয়। কিন্তু সেই দাবি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।


পরে এআইএডিএমকে-র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের চিকিত্সায় সাড়া দিচ্ছেন জয়ললিতা। কিন্তু শেষপর্যন্ত অনুরাগীদের কাতর প্রার্থনা ব্যর্থ করে সোমবার রাতে প্রয়াত হলেন আম্মা। অ্যাপোলো হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাঁর মৃত্যুর কথা ঘোষণা হতেই ভারতীয় রাজনীতিতে এক বর্ণময় চরিত্রের অবসান হল।


এর আগে রিচার্ড বিয়েল বলেন, চিকিৎসায় সাড়া মেলা সত্ত্বেও সার্বিক শারীরিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক। এখানেই শেষ নয়। ওই চিকিৎসক আরও আরও দাবি করেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাঁর সেই আশঙ্কাই সত্যি হল।


চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে জয়ললিতাকে রাখা হয়েছিল লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এক্সট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশনে (ইসিএমও) তত্ত্বাবধানে চলছিল চিকিৎসা। এটা মূলত একটি হার্ট অ্যাসিস্ট ডিভাইস।


এই প্রসঙ্গে রিচার্ড জানান, এটা হল এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে উন্নতমানের লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম। তাঁর দাবি, বিশ্বের সহব অত্যাধুনিক হাসপাতালে এই ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি জয়ললিতার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।


জয়ললিতার জন্য গড়া মেডিক্যাল বোর্ডে ছিলেন কার্ডিওলজিস্ট, পালমোনোলজিস্ট ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট।



চিকিৎসকদের তরফে আজ সকালে এক বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, তাঁরা তাঁদের সাধ্যমতো সবচেয়ে চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেই চেষ্টা বিফল হল।


জয়ললিতার শারীরিক অবস্থার কথা জানার পর, হাসপাতাল চত্বরে ভিড় করেছিলেন এআইএডিএমকে সমর্থকরা। হাসপাতালের বাইরে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর আরোগ্য কামনায় প্রার্থনা শুরু করেন। সেই প্রার্থনা পরিণত হল শোকে।


জয়ললিতার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা। আরোগ্য কামনা করে বার্তা পাঠান ডিএমকে প্রধান এম করুণানিধি ও তামিলনাড়ুর বিরোধী দলনেতা স্তালিন।


ট্যুইটবার্তায় আরোগ্য কামনা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু, নির্মলা সীতারমন। জয়ললিতার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল।


এদিকে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি সামাল দিতে গোটা রাজ্যকে মুড়ে ফেলা হয়েছে কড়া নিরাপত্তায়। সকাল ৭টা থেকেই বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


তামিলনাড়ু পুলিশের ডিজিপি টি কে রাজেন্দ্রন রাস্তায় নামার নির্দেশ দিয়েছেন সমস্ত পুলিশ অফিসারদের। সমস্ত পুলিশ অফিসারের ছুটি বাতিল করেছেন। প্রত্যেকে ডিউটিতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


সতর্কতা হিসেবে সারা হাসপাতাল এলাকা ঘিরে ফেলেছে নিরাপত্তা বাহিনী। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আধা সেনাকে। ডিজিপি জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে রাজ্য প্রশাসন।


সন্ধ্যাতেই কিছু সংবাদমাধ্যমে জয়ললিতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতাল চত্বরে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এরপরই, অ্যাপোলোর তরফে এক বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছিল, যে মৃত্যুর খবর 'একেবারে ভুয়ো'।


নেত্রীর অবর্তমানে দলের কাজকর্ম যাতে ঠিক থাকে, সে জন্য সন্ধ্যেয় বৈঠকে বসেন এআইএডিএমকে বিধায়করা।