অবন্তিপোরা: ফিরোজ আহমেদ দার কি চার বছর আগেই মৃত্যুকে দেখতে পেয়েছিলেন? না হলে ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি কেন তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন, ‘কখনও একটু চুপ করে থেকে নিজেকে প্রশ্ন করেছো, কবরে প্রথম রাতে আমার কী হবে? সেই মুহূর্তের কথা কল্পনা করো, তোমার শরীর ধুয়ে কবর দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেই দিনটার কথা ভাবো, যেদিন লোকজন তোমাকে কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে আর পরিবারের সবাই কাঁদছে। সেই মুহূর্তের কথা ভাবো, যখন তোমাকে কবর দেওয়া হচ্ছে। তুমি একা কবরের অন্ধকারে আছো।’


বন্ধুরা ফিরোজকে ‘দাবাঙ্গ’ এবং ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ বলে ডাকতেন। জম্মু ও কাশ্মীরের এই পুলিশ আধিকারিক সেই দিনটার অপেক্ষায় ছিলেন, যেদিন কাশ্মীর স্বাভাবিক হবে। ২০১৩ সালের ৮ মার্চ ফেসবুকে সে কথা লিখেওছিলেন ফিরোজ। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হল না। অশান্ত উপত্যকাতেই জঙ্গিদের হামলায় তাঁর জীবন শেষ হল।

এই পুলিশ অফিসার অনন্তনাগ জেলায় লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। পুলওয়ামা জেলার ডোগরিপোরা গ্রামে পারিবারিক সমাধিস্থলে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়েছে। তাঁকে চোখের জলে বিদায় জানিয়েছেন গ্রামের মানুষ। ফিরোজকে যখন কবরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তাঁর সেই ফেসবুক পোস্টের কথাই মনে পড়ছিল আত্মীয়-পরিজনদের। কবরে তাঁর প্রথম রাত কেমন কাটল, সেটাও ভাবছিলেন সবাই। তাঁর ছেলে আদ্দার বয়স ৬ এবং মেয়ে সিমরনের বয়স দুই। তারা বুঝতে পারছিল না, গ্রামের সবাই কেন তাদের বাড়িতে জড়ো হয়েছে। ফিরোজের স্ত্রী মুবিনা আখতার এবং বৃদ্ধ বাবা-মা শোকে ভেঙে পড়েছেন।

পরিবারের লোকেদের মতো ফিরোজের ব্যাচমেটরাও তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত। সুনীল শর্মা নামে এক ব্যাচমেট ফেসবুকে ফিরোজের ছবি দিয়ে ‘এলওসি কার্গিল’ ছবির ‘বস ইতনা ইয়াদ রহে, এক সাথি অউর ভি থা’ গানটির কথা লিখেছেন। দক্ষিণ কাশ্মীরের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ স্বয়ং প্রকাশ পানিও ফেসবুক পোস্টে ফিরোজকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।